১২ অগস্ট পালিত হবে জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগে ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে তাঁর জন্ম হয়। কৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম অবতার। ভগবত পুরাণ অনুযায়ী ষোলো কলায়ে কৃষ্ণ অবতারের সম্পূর্ণ সামর্থ্য প্রকাশিত হয়। আজ জানুন কৃষ্ণের ষোলো কলা সম্পর্কে—
১) শ্রী-ধন সম্পদ: এটি কৃষ্ণের প্রথম কলা। কৃষ্ণ ধনসম্পদে পূর্ণ ছিলেন। যে ব্যক্তির কাছে অগাধ ধন থাকে, এমনকি যে আত্মিক দিক দিয়েও ধনবান হয়, যার দরজা থেকে কেউ খালি হাতে না-ফেরে, সেই ব্যক্তি প্রথম কলায় সম্পন্ন মনে করা হয়।
২) ভূ-অচল সম্পত্তি: যে ব্যক্তির কাছে পৃথিবীর রাজত্বের ক্ষমতা আছে, পৃথিবীর এক বড় ভূ-ভাগে যার অধিকার রয়েছে, সেই এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তি যাঁর আজ্ঞা মেনে চলে, তিনি অচল সম্পত্তির মালিক হন। কৃষ্ণ নিজের যোগ্যতাবলে দ্বারকায় জনবসতি স্থাপন করেছিলেন। কৃষ্ণ ভূ-অচল সম্পত্তিতে পূর্ণ ছিলেন। এটিই তাঁর দ্বিতীয় কলা।
৩) কীর্তি-যশ প্রসিদ্ধি: যাঁর মান-সম্মান ও যশ-কীর্তি চারদিকে শোনা যায়, যাঁর প্রতি অন্যান্য ব্যক্তি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে ভরপুর থাকে, এমন ব্যক্তিই তৃতীয় কলা সম্পন্ন মনে করা হয়। কৃষ্ণ এই কলাতেও পরিপূর্ণ ছিলেন।
৪) ইলা: চতুর্থ কলা হল ইলা, যাঁর অর্থ মোহক-বাণী। পুরাণে উল্লেখ পাওয়া যায়, কৃষ্ণের বাণী শুনে শ্রোতা শান্ত হয়ে যেত। মনে ভক্তিভাব জাগ্রত হত। যশোদাকে নালিশ করতে আসা গোয়ালিনীরাও কৃষ্ণের বাণী শুনে, নালিশ ভুলে তাঁর প্রশংসায় মেতে উঠতেন।
৫) লীলা: পঞ্চম কলার নাম লীলা। এর অর্থ আনন্দ। কৃষ্ণের অপর নাম লীলাধর। তাঁর লীলা শুনে ব্যক্তি ভাবুক হয়ে ওঠে।
৬) কান্তি: যাঁর রূপ দেখে মন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আকর্ষিত হয়ে প্রসন্ন হয়ে যায়, যাঁর মুখমণ্ডল দেখে বার বার দেখার ইচ্ছা জাগে, সে ষষ্ঠ কলায় সম্পন্ন মনে করা হয়। রামের এই কলা উপস্থিত ছিল। কৃষ্ণ এই কলায়ে পরিপূর্ণ ছিলেন। তাঁর এই কলার জন্যই ব্রজবাসী আনন্দিত থাকতেন। অনেক মহিলাই কৃষ্ণকে স্বামী রূপে পাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করতেন।
৭) বিদ্যা: বেদ, বেদাঙ্গের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যুদ্ধ কলাতেও নিপুণ ছিলেন কৃষ্ণ। এমনকি রাজনীতি ও কূটনীতিতেও কৃষ্ণ সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
৮) বিমলা-পারদর্শিতা: যাঁর মনে কোনও ধরণের ছল-কপট থাকে না, তাঁকে অষ্টম কলায়ে পরিপূর্ণ মনে করা হয়। কৃষ্ণ সকলের প্রতি সমান ব্যবহার করেন। মহারাসের সময় কৃষ্ণ নিজের এই কলারই প্রদর্শন করেছিলেন।
৯) উৎকর্ষিণী-প্রেরণা ও নিয়োজন: মহাভারতের যুদ্ধের সময় কৃষ্ণ নবম কলার পরিচয় দেন। সে সময় যুদ্ধ-বিমুখ অর্জুনকে যুদ্ধের প্রেরণা দিয়েছিলেন। নবম কলায়ে প্রেরণাকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
১০) জ্ঞান-নীর ক্ষীর বিবেক: কৃষ্ণ নিজের জীবনে বেশ কয়েকবার বিবেকের পরিচয় দিয়ে সমাজকে নতুন পথ নির্দেশ করেছিলেন। গোবর্ধন পর্বতের পুজো হোক বা মহাভারতের যুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দুর্যোধনের কাছে পাঁচটি গ্রাম চাওয়াই হোক না-কেন— এটি কৃষ্ণের উচ্চস্তরের বিবেকের পরিচয়।
১১) ক্রিয়া-কর্মণ্যতা: ক্রিয়া হল একাদশ কলা। যার ইচ্ছানুযায়ী বিশ্বের যে কোনও কাজ সম্পন্ন হতে পারে, সেই কৃষ্ণ সাধারণ মানুষের মতো কাজ করেন ও অন্যকে কাজ করার প্রেরণা দেন। মহাভারতের যুদ্ধে অস্ত্র হাতে না-নিলেও, অর্জুনের সারথি হিসেবে যুদ্ধ সঞ্চালিত করেছিলেন।
১২) যোগ-চিত্তলয়: যাঁর মন কেন্দ্রিত, যে নিজের মনকে আত্মায়ে বিলীন করেছে, তিনি দ্বাদশ কলায়ে সমৃদ্ধ। তাই কৃষ্ণ যোগেশ্বর নামেও খ্যাত। কৃষ্ণ উচ্চস্তরের যোগী ছিলেন। নিজের যোগবলে কৃষ্ণ ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাত থেকে পরীক্ষিতকে উত্তরার গর্ভে জীবিত করেছিলেন।
১৩) প্রহবি-অত্যন্তিক বিনয়: ত্রয়োদশতম এই কলার অর্থ বিনয়। কৃষ্ণ সম্পূর্ণ জগতের প্রভু ছিলেন। সম্পূর্ণ সৃষ্টির সঞ্চালন তাঁর হাতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে অহঙ্কার ছিল না। সমস্ত বিদ্যায় পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞান প্রাপ্তির শ্রেয় গুরুকে দিতেন।
১৪) সত্য-যথার্য: কৃষ্ণ কটূ সত্য বলা থেকে কখনও পিছপা হতেন না। এমনকি ধর্মরক্ষার জন্য সত্য সকলের সামনে রাখতে জানতেন, এই কলা শুধুমাত্র কৃষ্ণের মধ্যেই রয়েছে।
১৫) এষণা-আধিপত্য: যে কলার উপস্থিতির ফলে ব্যক্তি অন্যের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারে, সেই কলাই হল ইসনা। নিজের জীবনে বেশ কয়েকবার এই কলার ব্যবহার করেছেন কৃষ্ণ। এর অন্যতম উদাহরণ হল, মথুরাবাসীদের দ্বারকায়ে বসতি গড়ে তোলার জন্য রাজি করানো।
১৬) অনুগ্রহ-উপকার: নিঃস্বার্থ ভাবে উপকার করাই কৃষ্ণের ষোড়শ কলা। ভক্তদের কাছ থেকে কখনও কিছু প্রত্যাশা করেননি কৃষ্ণ। তবে কেউ মনস্কামনা জানালে তিনি তা পূর্ণ করেন।