হিন্দু ধর্মে একাদশীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সমস্ত উপবাসের মধ্যে একাদশীর উপবাসকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে বিজয়া একাদশী বলা হয়। ৯ মার্চ অর্থাৎ আজ বিজয়া একাদশী। মনে করা হয়, বিজয়া একাদশীর উপবাস ও নিয়ম মেনে বিষ্ণু পুজো করলে ব্যক্তির সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, একাদশীর উপবাস করলে পুজোর তিনগুণ ফল পাওয়া যায়। কথিত আছে, লঙ্কা বিজয়ের আগে সমুদ্র তীরে বিজয়া একাদশীর পুজো-অর্চনা করেছিলেন রামচন্দ্র।
বিজয়া একাদশীর শুভ মুহূর্ত
একাদশী তিথি শুরু- ৮ মার্চ ২০২১, সোমবার দুপুর ৩টে ৪৪ মিনিটে।
একাদশী তিথি সমাপ্ত- ৯ মার্চ মঙ্গলবার দুপুর ৩টে ০২ মিনিটে।
বিজয়া একাদশী ব্রতভঙ্গের সময়- ১০ মার্চ সকাল ৬টা ৩৭ মিনিট থেকে ৮টা ৫৯ মিনিট।
বিজয়া একদাশী ব্রত কথা:
দ্বাপর যুগে কৃষ্ণের সামনে ফাল্গুন একাদশী সম্পর্কে জানার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির। ফাল্গুন একাদশীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৃষ্ণ বলেন যে, ‘হে কৌন্তেয়, নারদ মুনি সবার প্রথমে ব্রহ্মার কাছ থেকে ফাল্গুন কৃষ্ণ একাদশী ব্রতর কাহিনী ও মাহাত্ম্য জেনেছিলেন। এর পর তুমি এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চলেছ। এর সূত্রপাত ত্রেতা যুগে। সীতা হরণের পর রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সুগ্রীবের সেনার সঙ্গে লঙ্কার দিকে প্রস্থান করেন রামচন্দ্র। কিন্তু লঙ্কা পৌঁছনোর আগেই বিশাল সমুদ্র তাঁদের পথ আটকে দেয়। রামচন্দ্র লক্ষ্মণের কাছ থেকে সমুদ্র পার করার উপায় জানতে চাইলে, লক্ষ্মণ বলেন, প্রভু আপনি সর্বজ্ঞ, তবে তা সত্ত্বেও জানতে চাইলে, আমার কাছেও এর কোনও উপায় নেই। কিন্তু এখান থেকে কিছু দূরেই বকদালভ্য মুনির আশ্রম রয়েছে। তাঁর কাছে এর কোনও না-কোনও উপায় নিশ্চয়ই পাবেন।’ এরপরই বকদালভ্য মুনির কাছে পৌঁছন রামচন্দ্র। সমস্যা শোনার পর ঋষি তাঁকে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে সমস্ত সেনা-সহ উপবাস পালনের কথা বলেন। বলেন, 'এই ব্রতর প্রভাবে সমুদ্র পার করতে সফল হবেন তাঁরা এবং লঙ্কা বিজয়ও সম্ভব হবে। এই একাদশী ব্রত পালন করার পরই রামসেতুর নির্মাণ করে লঙ্কাবিজয় করেন রামচন্দ্র।’
একাদশীর ভুলেও করবেন না কী কী :
- এদিন জুয়া খেলা অনুচিত। এমন করলে ব্যক্তির বংশ নষ্ট হয়।
- একাদশীর রাতে ঘুমোতে নেই। সারা রাত জেগে বিষ্ণুর ভক্তি ও মন্ত্র জপ করা উচিত।
- এদিন চুরি করতে নেই। এমন করলে ৭টি প্রজন্ম সেই পাপের অংশীদার হয়ে পড়ে।
- বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভের জন্য খাওয়া-দাওয়া ও ব্যবহারে সাত্বিকতা পালন করা উচিত। কঠোর শব্দ ব্যবহার করে কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। রাগ ও মিথ্যা বচন এড়িয়ে যান।
- একাদশীর দিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাওয়া উচিত এবং সন্ধে বেলা ঘুমানো অনুচিত।