আজ জগদ্ধাত্রী পুজো। কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর উল্লাস ও উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। জগদ্ধাত্রী ত্রিনয়নী ও চতুর্ভূজা। শঙ্খ, চক্র, তির ও ধনুক ধারণ করেছেন হাতে। সিংহ তাঁর বাহন। লোহিত বস্ত্র পরিহিতা, অলঙ্কারে ভূষিতা জগদ্ধাত্রী নাগ যজ্ঞোপবীতধারিণী। মমতাময়ী জগদ্ধাত্রীর আশীর্বাদে সমগ্র সমাজ ধন্য। কিন্তু অত্যাচারী ও দূরাচারীর জন্য তিনি স্বয়ং কাল ভৈরবী। জগদ্ধাত্রীর সৃষ্টি সম্পর্কে একাধিক পৌরাণিক কাহিনীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
জগদ্ধাত্রীর সৃষ্টি সম্পর্কে একটি পুরাণ থেকে জানা যায়, মহিষাসুর বধের পর অত্যধিক উল্লসিত দেবতাদের দর্প চূর্ণ করার জন্য দেবীর এই রূপের সৃষ্টি। মহিষাসুর বধের পর দেবতারা ভাবতে শুরু করেন দুর্গা যেহেতু তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ, তাই অসুর বধের সমস্ত কৃতিত্ব তাঁদেরই। দুর্গার উৎপত্তি কেবলই ব্রহ্মার বরের সম্মানরক্ষার্থে। দেবতাদের অহংকার চূর্ণ করতে ও শক্তি পরীক্ষার উদ্দেশে একটি তৃণখণ্ড তাঁদের দিকে ছুড়ে দেন দেবী। কিন্তু ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু বা বরুণ দেব— কেউই সেই তৃণকে আটকাতে পারেননি। দেবতাদের ব্যর্থতা দেখে তাঁদের সামনে আবির্ভূতা হন স্বয়ং জগদ্ধাত্রী। এই সামান্য তৃণখণ্ডের মাধ্যমে তিনি দেবতাদের বুঝিয়ে দেন যে তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি।
আবার অপর একটি ধারণা অনুযায়ী, একদা যক্ষ দেব বায়ু দেবকে প্রশ্ন করেন, তিনি নিজের ক্ষমতার সাহায্যে কী কী করতে পারেন। এর উত্তরে বায়ু জানান, যত উঁচু পাহাড়ই হোক না-কেন, তিনি তা পার করতে পারবেন। এমনকি ব্রহ্মাণ্ডের গতির চেয়েও তীব্র গতিতে তিনি ব্রহ্মাণ্ডের পরিক্রমা করতে পারবেন। এর পরই তাঁর পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত হন যক্ষ। এক অতি সূক্ষ্ম রূপ ধারণ করে বায়ুকে সেই রূপ নষ্ট করে দেখাতে বলেন তিনি। কিন্তু যক্ষের কোনও ক্ষতিই করতে পারেন না বায়ু। এমনকি অন্য সমস্ত দেবতাও একে একে পরাস্ত হন। পরাজয়ের পর নিজের অহংকারী স্বভাবের আভাস পান দেবতারা। যে দেবীর কৃপায় দেবতারা তাঁদের সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছেন, তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন যক্ষ। এর পরই জগদ্ধাত্রীর শরণে যান দেবতারা।
আবার এমনও উল্লেখ পাওয়া যায়, জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুর নামক এক অসুর বধ করেছিলেন। উল্লেখ্য, সংস্কৃতে হাতির আর একটি নাম করী। মনে করা হয়, জগদ্ধাত্রী দুর্গারই আর এক রূপ। প্রচলিত আছে, যুদ্ধের সময় মত্ত মহিষাসুর মায়ারূপ ধারণ করে জগদ্ধাত্রীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এ ভাবেই দেবীকে বিভ্রান্ত করতে হস্তীরূপ ধারণ করে মহিষাসুর। হস্তীরূপী মহিষাসুর দুর্গাকে বধ করতে চাইলে দুর্গা ধারণ করেন সিংহবাহিনী চতুর্ভূজা দেবীর রূপ। তার পরই চক্র দিয়ে হাতির শুঁড় ছেদন করেন দেবী। দুর্গার এই রূপটিই জগদ্ধাত্রীর। বর্তমানে যে রূপে জগদ্ধাত্রী পূজিত, সেখানেও দেখা যায় পরমাসুন্দরী চতুর্ভূজা, সিংহবাহিনী জগদ্ধাত্রী নিজের বাহন-সহ একটি মৃত গজের শরীরের ওপর দাঁড়িয়ে।