১৭৩৫ খ্রিস্টাব্দে যশোর জেলা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত মহাকুমার অন্তর্গত চাকলা গ্রামে লোকনাথ বাবার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম ছিল রামনারায়ন এবং মায়ের নাম ছিল কমলাদেবী। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন তিনি। এই সময় মাত্র এগারো বছর বয়সে তাকে উপনয়ন করিয়ে, পাশের গ্রামের ভগবান গাঙ্গুলীর হাতে সন্ন্যাস এর জন্য তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার বাল্যবন্ধু ছিল বেণীমাধব। অনেকেই তাঁকে শিবের অবতার বলে মনে করেন।
কথিত আছে বাবা যখন বরোদাতে ছিলেন, সেই সময় সেখানকার লোভী ব্রাহ্মণ সমাজ তাকে হিংসা করতে শুরু করে। সেই গ্রামে কামাখ্যা নামে এক অহংকারী সাধক ছিলেন, যিনি লোকনাথ বাবাকে সিদ্ধিলাভের প্রমাণ দিতে বলেন, কামাখ্যা বলেছিলেন লোকনাথ বাবা যদি সিদ্ধপুরুষ হন তবে তিনি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করবেন। লোকনাথ বাবাকে ধুতরা ফুল ও ভয়ংকর সাপের বিষ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই বিষ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি বলতেন তাঁর মায়ের হাতের দুধ তার মৃত্যুকেও জয় করতে পারে, সেজন্য তাকে চিতায় শয়নরত অবস্থায় রাখার আগে তার মা হাতে করে দুধ পান করিয়েছিলেন, আর সত্যিই সকলকে অবাক করে দিয়ে তিনি চিতা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। এরপর এই সমগ্র ব্রাহ্মণ সমাজ এবং কামাখ্যা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এরকম আরো অনেক লৌকিক কথা প্রচলিত আছে লোকনাথ বাবার প্রসঙ্গে।
আজ ১৯ জ্যৈষ্ঠ লোকনাথ বাবার তিরোধান দিবস। লোকনাথ বাবা খুব অল্পতেই ভক্তদের উপর সন্তুষ্ট হন। আজকের দিনে প্রত্যেকের বাড়িতে লোকনাথ বাবার পুজো সম্পন্ন হচ্ছে।
কথিত আছে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বারদী আশ্রমে তিনি সমাধিস্থ হয়েছিলেন। জানা যায় যে এক ভক্ত পুত্রের যক্ষ্মারোগ তিনি নিজের শরীরে ধারণ করেছিলেন যাতে বালকটি পুরো সুস্থ হয়ে ওঠে এবং এই ঘটনার কিছুদিন পর যক্ষ্মা রোগে তার মৃত্যু ঘটে। শোনা যায় লোকনাথ বাবার মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১৬০ বছর। ১৯ জ্যৈষ্ঠ মহা সমাধিতে থেকে বাবার তিরোধান হয়।
তিনি মানুষকে সর্বদা সত্যের পথে চলতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। যে ব্যক্তি সৎ ধার্মিক নির্ভীক ভক্তিপরায়ন এরকম মানুষের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করার কথা বলেছিলেন।
লোকনাথ বাবার পূজার উপকরণ:
শাপলা ফুল বাবার পূজার প্রধান উপকরণ, নীল শাপলা বিশেষ তার পূজার জন্য। এছাড়া অন্য যেকোনো সাদা ফুল বাবাকে দেওয়া যায়। মিশরি আর কালোজাম তার প্রিয় ভোগ। এছাড়া অন্যান্য সাদা মিষ্টি তার ভোগে দেওয়া হয়ে থাকে। এই দিন লোকনাথ বাবার সঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেবেরও পুজো করার বিধান রয়েছে।