ভাদ্রপদ শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অনন্ত চতুর্দশী ব্রত পালিত হয়। চলতি বছর ১৯ নভেম্বর এই ব্রত হবে। অনন্ত অর্থাৎ, যাঁর আদি বা অন্ত কিছুই জানা নেই। স্বয়ং শ্রীহরিই অনন্ত। এই পুজোয় স্নান সেরে অক্ষত, দূর্বা, শুদ্ধ রেশম বা কার্পাসের সুতো দিয়ে তৈরি এবং হলুদে রঙ করা ১৪ গিঁটের অনন্তকে সামনে রেখে যজ্ঞ করা হয়। এর পর অনন্ত দেবকে স্মরণ করে এই শুদ্ধ অনন্ত, অর্থাৎ পুজো করা সুতোটিকে পুরুষরা ডান এবং মহিলারা বাঁ হাতে বাঁধেন। এ দিন যাঁরা উপবাস করেন, তাঁরা এক বেলা সিমাই যুক্ত মিষ্টি খাবার খান। এদিন প্রথম পূজ্য গণেশের বিসর্জনও করা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী অনন্ত চতুর্দশীর ব্রত কথা যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। রাজ্যহীন পাণ্ডবদের অনন্ত চতুর্দশীর ব্রত পালনের পরামর্শ দেন কৃষ্ণ। তখন যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে অনন্ত সম্পর্কে জিগ্যেস করেন। কৃষ্ণ জানান, অনন্ত আসলে শ্রীহরির স্বরূপ। নিয়ম মেনে অনন্ত চতুর্দশীর পুজো করলে সমস্ত সঙ্কট দূর হয়।
চতুর্দশী তিথি ও শুভক্ষণ
অনন্ত চতুর্দশী তিথি শুরু- ১৯ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকাল ৬টা ০৭ মিনিটে।
অনন্ত চতুর্দশী তিথি সমাপ্ত- ২০ সেপ্টেম্বর, সোমবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে।
ব্রত কথা
সুমন্ত নামক এর বশিষ্ঠ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। মহর্ষি ভৃগুর কন্যা দীক্ষার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। সুমন্ত ও দীক্ষার এক কন্যা হয়, যাঁর নাম রাখা হয় সুশীলা। অসময়ে দীক্ষার মৃত্যুর পর সুমন্ত কর্কশার সঙ্গে বিবাহ করেন। সুশীলার বিয়ে হয় কৌণ্ডিন্য মুনির সঙ্গে। তবে কর্কশার রাগের কারণে অসহায় হয়ে পড়ে সুশীলা। নিজের স্বামীর সঙ্গে এক নদীর পাশে পৌঁছন সুশীলা। সেখানে কিছু মহিলাকে ব্রত পালন করতে দেখেন তিনি। সুশীলাকে অনন্ত চতুর্দশী ব্রতর মাহাত্ম্য জানান এবং বলেন যে, অনন্ত সূত্র বাঁধার সময় এই মন্ত্র পাঠ করা উচিত—
‘অনন্ত সংসার মহাসমুদ্রে মগ্নং সমভ্যুদ্ধর বাসুদেব।
অনন্তরূপে বিনিয়োজয়স্ব হৃনন্তসূত্রায় নমো নমস্তে।।’
অর্থাৎ-- ‘হে বাসুদেব! অনন্ত সংসাররূপী মহাসমুদ্রে আমি ডুবছি। আপনি আমাকে উদ্ধার করুন। নিজের অনন্ত স্বরূপে আমাকে নিযুক্ত করুন। হে অনন্তস্বরূপ! আপনারে বারং বার প্রণাম জানাই।’ সুশীলা এমনই করে। কিন্তু কৌণ্ডিন্য মুনি রাগবশত অনন্ত সূত্র ছিঁড়ে দেন। ফলে তাঁদের জীবনে কষ্ট দেখা দেয়। ক্ষমা প্রার্থনার পর অনন্ত দেব তাঁদের সংকট দূর করেন।