ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশীর দিনে প্রদোষ ব্রত পালিত হয়। ১০ মার্চ, বুধবার প্রদোষ ব্রত। বুধবার প্রদোষ ব্রত পালিত হবে বলে এটি বুধ প্রদোষ ব্রত নামে প্রসিদ্ধ। প্রচলিত আছে, সবার প্রথমে চন্দ্র এই ব্রত পালন করেছিলেন। এরপরই শিবের আশীর্বাদে তিনি ক্ষয় রোগ থেকে মুক্তি পান। ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, প্রদোষ ব্রত পালন করলে দুটি গরু দানের সমান ফল লাভ করা যায়। প্রদোষ ব্রত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, ত্রয়োদশী তিথিতে শিব অত্যন্ত প্রসন্ন থাকেন এবং সন্ধ্যার সময় কৈলাস পর্বতে নিজের রজত ভবনে নৃত্য করেন।
বুধ প্রদোষ ব্রতর শুভক্ষণ ও তিথি:
প্রদোষ ব্রত তিথি- ১০ মার্চ (বুধবার)
ফাল্গুন, কৃষ্ণ ত্রয়োদশী শুরু- ১০ মার্চ, দুপুর ২ টো ৪০ মিনিটে।
ত্রয়োদশী তিথি সমাপ্ত- ১১ মার্চ দুপুর ২ টো ৩৯ মিনিটে।
প্রদোষ ব্রত নিয়ম:
১. এদিন উপবাস করলে সকালে তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া উচিত।
২. স্নানের পর শিবের ধ্যান করা উচিত।
৩. এই ব্রত পালন করলে খাবার খেতে নেই।
৪. রাগ ও বিবাদ এড়িয়ে যান।
৫. প্রদোষ ব্রতর দিনে ব্রহ্মচর্য পালন করা উচিত।
৬. সূর্যাস্তের এক ঘণ্টা আগে স্নান করে শিব পুজো করা উচিত।
৭. প্রদোষ ব্রতর পুজোয় কুশের আসনে ব্যবহার করুন।
বুধ প্রদোষ ব্রতর কাহিনি:
কথিত আছে, বিয়ের দু'দিন পর নিজের পিতৃ গৃহে প্রস্থান করেন এক নববিবাহিতা স্ত্রী। কিছু দিন পর নিজের স্ত্রীকে আনতে শ্বশুরবাড়ি যান তাঁর স্বামী। তবে বুধবার নিজের স্ত্রীকে নিয়ে সেখান থেকে ফিরতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে বাধা দেয়। বলে যে, বুধবারের দিন বিদায়ের জন্য অশুভ। কিন্তু কারও কোনও কথায় কান না দিয়ে, তিনি স্ত্রী'কে নিয়ে সেখান থেকে রওনা দেন। কিন্তু শহরের বাইরে আসার পরই তাঁর তৃষ্ণার্ত স্ত্রীয়ের জন্য জলের খোঁজে ঘট নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। এক গাছের ছায়ায় স্বামীর অপেক্ষায় বসে পড়েন ওই নববিবাহিতা। কিছু ক্ষণ পর ওই ব্যক্তি জল নিয়ে ফিরলে স্ত্রী'কে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। তিনি দেখেন যে, গাছতলায় বসে থাকা তাঁর স্ত্রী এক অন্য ব্যক্তির সঙ্গে হেসে কথা বলছেন এবং তাঁর ঘট থেকে জল পান করছেন। এই দৃশ্য দেখেই রেগে যান তিনি।
তবে সামনে গিয়ে ওই পুরুষের চেহারা দেখে নববিবাহিত ব্যক্তি চমকে ওঠেন। হুবহু তাঁর মতোই দেখতে ওই পুরুষকে। এর পর তাঁকে দেখে তাঁর স্ত্রীও চিন্তায় পড়ে যান। দুই পুরুষের মধ্যে বিবাদ বাধে হয়। ঝগড়া বাড়তে থাকলে সেখানে ভিড় জমা হয় এবং সৈনিকরাও এসে পড়েন। দুই যমজ পুরুষ দেখে সকলে আশ্চর্যে পড়ে যান। তখন সকলে স্ত্রীকে জিগ্যেস করেন যে, এঁদের মধ্যে তাঁর স্বামী কে? স্ত্রীও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তখন শিবের কাছে নববিবাহিত ব্যক্তি প্রার্থনা করে বলেন যে, ‘হে ভগবান। আমাদের রক্ষা করুন। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমি শ্বশুর-শাশুড়ির কথা না-শুনে বুধবার নিজের স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছি। ভবিষ্যতে এমন কোনও দিনও করব না।’
তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তি অন্তর্ধ্যান হয়ে যান। স্বামী-স্ত্রী নিজের বাড়ি পৌঁছে যায়। এর পর থেকে তাঁরা নিয়ম মেনে বুধ ত্রয়োদশীর ব্রত পালন করতে শুরু করেন।