কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ছট মহোৎসব পালিত হয়। এ বছর ২০ নভেম্বর ছট পুজো। চারদিনের এই উৎসব সন্তানের দীর্ঘায়ু, সুখ-সৌভাগ্য ও উন্নত জীবনের জন্য করা হয়। কার্তিক শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথি থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়। ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত নির্জলা উপবাস রাখা হয় এই পুজোয়। এই উৎসবে মুখ্যত সূর্য ও জলকে সাক্ষী মেনে পুজো করা হয়।
মনে করা হয়, ছট পুজো বৈদিক কাল থেকে প্রচলিত । এই ব্রত মুখ্যত ঋষি দ্বারা রচিত ঋগ্বেদ, সূর্য পুজো ও ঊষা পুজো করা হয়। এখানে জানুন ছট পুজো সম্পর্কে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি সম্পর্কে—
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, প্রিয়ংবদ নামক এক নিঃসন্তান রাজা সন্তান লাভের জন্য যজ্ঞ করান। মহর্ষি কশ্যপ পুত্র লাভের জন্য যজ্ঞ করার পর প্রিয়ংবদের স্ত্রী মালিনীকে প্রসাদ হিসেবে পায়েস দেন। এর পর রাজার পুত্র লাভ হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই পুত্র মৃত জন্ম নেয়। দুঃখিত প্রিয়ংবদ পুত্রশোকে প্রাণ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় ব্রহ্মার মানসপুত্রী দেবসেনা প্রকট হন ও রাজাকে তাঁর পুজো করতে বলেন। এই দেবীর উৎপত্তি সৃষ্টির মূল প্রবৃত্তির ষষ্ঠ অংশ থেকে। তাই একে ষষ্ঠী বা ছটি মাইয়া বা ছট দেবী বলা হয়। দেবীর নির্দেশ অনুসারেই রাজা প্রিয়ংবদ ষষ্ঠী পুজো করেন, এর পরই ওনার পুত্র লাভ হয়।
আবার অন্য এক প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, মহাভারতের সময়কাল থেকে ছট পুজো শুরু হয়। মনে করা হয়, সবার আগে সূর্যপুত্র কর্ণ সূর্যের পুজো করে করেন। কর্ণ প্রতিদিন কোমর পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে থেকে সূর্য পুজো করতেন ও অর্ঘ্য দিতেন। সূর্যের আশীর্বাদেই তিনি মহান যোদ্ধা হন। তাই ছটে সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। আবার আর একটি প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, পাশা খেলায় নিজের সমস্ত রাজ্য হেরে যাওয়ার পর দ্রৌপদী ছট ব্রত পালন করেন। এই ব্রত পালনের পর পাণ্ডবব নিজের রাজ্য ফিরে পান। লোককথা অনুযায়ী, সূর্যদেব ও ছট দেবী ভাই-বোন। তাই ছট পুজোয় ছট দেবীর সঙ্গে সূর্যের আরাধনা ফলদায়ী মনে করা হয়।
অন্য দিকে রামায়ণেও ছট পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, সীতাও ছট পুজো করে ছিলেন। ১৪ বছরের বনবাসের পর যখন রাম অযোধ্যা ফিরে আসেন, তখন রাবণ বধের পাপ থেকে মুক্তির জন্য ঋষি-মুনির আদেশে রাজসূয় যজ্ঞ করার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য মুগ্দল ঋষিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু মুগ্দল ঋষি রাম ও সীতাকেই নিজের আশ্রমে আসার আদেশ দেন। ঋষির আজ্ঞায় রাম ও সীতা আশ্রমে এলে সেখানে তাঁদের ছট ব্রত সম্পর্কে জানানো হয়। ঋষি মুগ্দল গঙ্গা ছিটিয়ে সীতাকে পবিত্র করেন ও কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যদেবের উপাসনার আদেশ দেন। তার পর সেখানে থেকেই সীতা ৬ দিন পর্যন্ত সূর্য পুজো করেন।