বাংলা নিউজ>ভাগ্যলিপি>উৎসব সূচি ২০২৩

উৎসব সূচি ২০২৩

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু পার্বণ মানে কি শুধুই দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো? তা তো নয়, বাঙালির কাছে তো রবীন্দ্রজয়ন্তীও একটি পার্বণ। কিংবা খুশির ইদ। আর পয়লা বৈশাখও।

পয়লা বৈশাখের কথাই যখন এল, তখন বৈশাখ দিয়েই শুরু করা যাক। এই মাসের প্রথম দিনেই হয় পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান। বাংলার বছর শুরু। তার সঙ্গে এই দিনেই হয় হালখাতা পুজোর অনুষ্ঠানও। এই মাসেই আবার গন্ধেশ্বরী দেবীর পুজোও করেন অনেক বাঙালি। তবে এই মাসের সবচেয়ে বড় উৎসব বোধহয় রবীন্দ্রজয়ন্তী। বাঙালির ‘ঠাকুর পুজো’র দিন।

পার্বণের শেষ নেই জ্যৈষ্ঠেও। রামমোহন রায়ের জন্মদিন আছে। সেই দিনটিতে বাঙালি স্মরণ করে নবজাগরণের দিনগুলির কথা। ঠিক তার পর পরই আসে জামাইষষ্ঠী। একেবারে পেটপুজোর দিন। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে জামাইয়ের ‘পৈটিক’ যোগাযোগের এই শুভদিনটিতে বাজার থাকে আগুন, তবু মনে থাকে আনন্দ। ওই মাসেই গরমের দাবদাহের মধ্যে চলে গঙ্গাদেবী আর মনসা মায়ের পুজোও।

জ্যেষ্ঠের শেষে আষাঢ় ঢোকার পালা। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় কড়া নাড়েন জগন্নাথ ঠাকুর। সঙ্গে বোন সুভদ্রা আর দাদা বলরাম। কে বলেছে, রথযাত্রা শুধু উৎকলের উৎসব! বাঙালির বাড়িতে সেদিন রথ টানার বহর দেখলে, কে বলবে এটি বাঙালির নিজস্ব উৎসব নয়! ওই মাসেই তিন বিখ্যাত বাঙালির জন্মও। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর বিধান রায়। গ্রীষ্মেই কোনও কোনও বছর এসে যায় খুশির ইদ। চান্দ্র পঞ্জিকা মতে, এক মাসের রোজার শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মেতে ওঠেন খুশির ইদে। এমনকী অন্য ধর্মের বহু বাঙালির কাছেও এই দিনটি একই রকম আনন্দের। মিলে মিশে সব কিছু একাকার হয়ে যায় উৎসবের মেজাজে।

এর পরের মাস শ্রাবণ। শিবঠাকুরের মাস। তার সঙ্গে এই মাসেই আবার কোনও কোনও বছরে পড়ে যায় ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতা দিবস। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতেও এদিন উৎসবের মেজাজ। দেশকে ভালোবাসার মেজাজ। এও তো পার্বণই বটে।

শ্রাবণের শেষ। বর্ষা ঋতুর শেষ। তবু বৃষ্টি কাটে না এই বঙ্গদেশে। ভাদ্র আসে। সঙ্গে করে নিয়ে আসে আরও হাজারো পার্বণ। আরও হাজারো উৎসব। ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী। বাঙালির মন কৃষ্ণপ্রেমে মজে ওঠে। সঙ্গে বাবা লোকনাথের জন্মদিনও এই মাসেই। সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মও এই মাসেই। এটিও তো বাঙালির কাছে উৎসব।

বর্ষার মেজাজ এবার কাটে। পেটের মধ্যে জল ভরে এত দিন আকাশের গায়ে ভেসে বেড়ানো মেঘের দল ধীরে ধীরে পাতলা হয়। রেললাইনের দু’পাশে সাদা কাশফুল ভরে ওঠে। হাজির হয় আশ্বিন। বাঙালির তড় সয় না। এই সময়টার জন্যই তো টানা এক বছর অপেক্ষা। বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শুরু। তার পরে মহালয়ার তর্পন। অবশেষে আসেন মা দুগ্গা। চার দিন ধরে তাঁকে নিয়ে চলে বাঙালির মহোৎসব। নামেই চার দিন, আসলে আগে পিছে মিলিয়ে মাস খানেকের ব্যাপার তো বটেই। পুজোর আগে, তার কেনাকাটা আছে। সেটাও তো উৎসব। বেড়ানোর পরিকল্পনা করা আছে। রাত জেগে ঠাকুর দেখার হিসাব কষা আছে। এর কোনটি উৎসব নয়? চার দিনের শেষে বিদায় নেন মা দুর্গা। দশমীতে তাঁকে বিদায় জানিয়ে বাঙালি কিছুটা মনখারাপ করে। বছরের সেরা উৎসবের শেষ হল বলে। কিন্তু সেই দুঃখে কিছু প্রলেপ দিতেই বোধহয় হাজির হন মা কালী। কালীপুজো। সঙ্গে বাজির উৎসব দীপাবলি। তবে মাঝখানে দেখা করে যান মা লক্ষ্মীও। কোজাগরি পূর্ণিমায় মা লক্ষ্মীর পুজোর পর থেকেই বাঙালির অপেক্ষা চলে অমাবস্যায় মা কালীর দেখা পাওয়ার। তিনি আসেন। আঁধার রাতে আলোর রোশনাই নিয়ে আসেন। সব মালিন্য, সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়ে যান তিনি। উৎসবের মেজাজে এবার একটু ভাটা পড়ে। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা এঁকে বোনেরা এবার প্রস্তুত হন বিনা উৎসবের জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য। ভাইরাও সন্দেশ আর পায়েশ খেতে খেতে মনের দুঃখে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলেন।
কিন্তু উৎসবের কি সত্যিই শেষ আছে? তাই দুর্গা মা এসে হাজির হন আবার। এবার তিনি জগদ্ধাত্রীর বেশে। বহু বাঙালি বাড়ি এবার সেজে ওঠে সেই সাজে। তবে তার আগেই কিন্তু উঁকি দিয়ে গিয়েছেন কার্তিক ঠাকুর। আর এ সবের মধ্যেই আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিক মাস হয়ে বাঙালি প্রস্তুত হতে থাকে অগ্রহায়নের জন্য। শীত আসছে। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই।

অগ্রহায়নের শীত শীতে ভাবের মধ্যেই এসে যায় রাসযাত্রা। এই মাসেই কিন্তু বহু নামজাদা বাঙালি ব্যক্তিত্বের জন্ম। সে সব উদযাপনেও ভোলে না বাঙালি। তালিকায় আছে জগদীশচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম বসু, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত সব নাম।

এবার পৌষের পালা। বেশ ঘন হয়ে বসা শীতের পালা। আর শীত মানেই ডিসেম্বরের শেষ। বড়দিনের ছুটি। তাহলে তো এবার যিশু পুজো করতেই হবে। তবে এই পুজোর ধরনধারণ আলাদা। বাঙালির কাছে এই পুজোর তীর্থস্থান হল পার্কস্ট্রিট আর বিভিন্ন চার্চ, প্রসাদ হল কেক। সব মিলিয়ে চলতে থাকে শীত পার্বণ উদযাপনের পালা। তার সঙ্গে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন। সঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না কল্পতরু উৎসবের কথাও।

দেখতে দেখতে পৌষ কেটে মাঘ। ওদিকে ইংরেজিতেও জানুয়ারি মাস। নেতাজির জন্মদিন এই মাসেই। বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব। সাধারণতন্ত্র দিবসও উদযাপিত হয় এই সময়েই।

এসব করতে করতেই মাঘের শীতে বাঘের ভয় কাটে। বাঙালির বাংলা বছর এসে দাঁড়ায় ফাল্গুনে। আসেন দেবী সরস্বতীও। আর আসে শিবরাত্রি আর ঠাকুর রামকৃষ্ণের জন্মদিন। বসন্তে বাংলার ঘরে ঘরে রং ধরে। চৈত্র কড়া নাড়ে। সঙ্গে আসে রঙের উৎসব দোলযাত্রাও।

বছর ফুরোয়। ফুরোয় না উৎসবের মেজাজ। আবারও ফিরে আসে নতুন বছর। নতুন করে উৎসবের সূচনা হয়। আপনার নিজের উৎসব, ভালোবাসার এই সব উৎসবের সঙ্গে সব সময়ে জুড়ে থাকতে চান? চান তার প্রতিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজখবর? তাহলে তার সুলুকসন্ধান চালাবেন কোথায়? হতে পারে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। কিন্তু সেই তেরো পার্বণের ঠিকানা একটাই। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার এই উৎসবের পাতা। আপনার নিজের উৎসবের পাতা। যার প্রতিটি শব্দে লেখা রইল আপনার আনন্দের ঠিকানা।

FAQ's

বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব কী?

বাংলার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে উদযাপিত উৎসবগুলোর মধ্যে একটি হল দুর্গাপূজা, যাকে অনেকেই এই অঞ্চলের সেরা উৎসব বলে মনে করেন। দুর্গাপূজা দেবী দুর্গার উপাসনার জন্য পরিচিত, যিনি নারী শক্তির মূর্ত প্রতীক এবং অশুভের বিনাশকারী হিসাবে সম্মানিত। মূলত হিন্দু ধর্মের মানুষই এই উৎসবে সামিল হন।

বাংলার নববর্ষ কবে পালন করা হয়?

বাংলার নতুন বছর বা নববর্ষ, যা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছরের ১৪ বা ১৫ এপ্রিলে পালন করা হয়। এই উৎসবটি এখন একটি গভীর সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পয়লা বৈশাখ বা বৈশাখী উৎসবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের বাঙালিদের সেরা ৫টি উৎসব কী কী?

রোজার ইদ বা খুশির ইদ। কুরবানির ইদ। দুর্গা পূজা। পয়লা বৈশাখ। বিজয় দিবস— এই পাঁচটি হল বাংলাদেশের বাঙালিদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব।

দুর্গাপুজো কবে হয়?

বাংলা পঞ্জিকা মতে, সাধারণত আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজো হয়। ইংরেজির ক্যালেন্ডারের হিসাবে এটি সাধারণত অক্টোবর মাসেই পড়ে। তবে কোনও কোনও বছর সেপ্টেম্বরেও এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

বাঙালিদের মধ্যে কী কী ধরনের উৎসব পালন করতে দেখা যায়?

বাংলার ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি, এখানে সামাজিক উৎসব, জাতীয় উৎসব এবং লোক উৎসব পালন করা হয়।

বাংলার সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবগুলি কী কী?

বাঙালি হিন্দুরা যে সমস্ত ধর্মীয় উৎসব পালন করেন তার মধ্যে হল দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, বাসন্তী পুজো, মনসা পুজো, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পুজো, শিবের গাজন ইত্যাদি। বাঙালি মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলি হল ইদ উল ফিতর, ইদ উল আযহা, মহররম ইত্যাদি। বাঙালি খ্রিস্টানরা বড়দিন ও গুড ফ্রাই ডে পালন করেন, বৌদ্ধরা বুদ্ধ পূর্ণিমা ও শিখদের কাছে গুরু নানকের জন্মদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

বাংলার জাতীয় উৎসব কী কী?

বাঙালিরা যে সমস্ত জাতীয় উৎসব পালন করেন, সেগুলি হল স্বাধীনতা উৎসব, প্রজাতন্ত্র দিবস, গান্ধীজীর জন্ম দিবস, নেতাজির জন্ম দিবস ও বিবেকানন্দের জন্ম দিবস ইত্যাদি।

বাংলার সামাজিক উৎসবের মধ্যে কী কী রয়েছে?

বাঙালিরা সামাজিক উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে মিলন ও আদান প্রদানের ভূমিকাকে গড়ে তোলেন। বাঙালিরা যে সমস্ত সামাজিক উৎসব পালন করেন, তা হল বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন পালন, জামাইষষ্ঠী, ভাইফোঁটা ইত্যাদি।

বাংলার লোক উৎসব কী কী?

বাঙালির জীবন ধারার সঙ্গে অনেক রকমের লোক উৎসব এর প্রচলন আছে। বাঙালিরা ধান উঠার সময় নবান্ন উৎসব খুব আনন্দের সহিত পালন করেন। এছাড়া বাঙালিরা যে সমস্ত লোক উৎসব পালন করেন, সেগুলি হল ভাদু, টুসু ইত্যাদি।