এই বাংলায় অসংখ্য মন্দির রয়েছে, কিন্তু সরস্বতী মন্দির কটা আছে সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয় । কিন্তু এমনই এক মন্দির রয়েছে হাওড়ার পঞ্চানন তলায়। উমেশ চন্দ্র দাস লেনের এই সরস্বতী মন্দিরে মা সরস্বতী নিত্য পূজিত হন।
মন্দিরের গলির ঠিক পাশেই রয়েছে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি পার্ক। যখন বঙ্কিমচন্দ্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন, তখন তিনি পঞ্চানন তলার বাড়িতে বেশ কয়েক বছর ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সহ বহু বাংলার বিখ্যাত মনীষীরা এই বাড়িতেই সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
এই মন্দির ঘিরেই চলছে এখন সাজো সাজো রব। পিতলের ত্রিশুলওয়ালা চূড়া এখন আর দূর থেকে সেভাবে চোখে পড়ে না, বড় বড় বিল্ডিং এর আড়ালে। তবে মন্দিরের দেওয়ালে হাঁস ও বীণা দ্বারা সজ্জিত এই প্রাচীন মন্দির বর্তমানে হলুদ রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। মন্দিরের দেয়ালে গায়ে পড়েছে নতুন রঙের পোঁচ।
দাস পরিবারের সদস্য অমলেন্দু দাসের বয়ান অনুযায়ী তার দাদু রণেশ চন্দ্র ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি কর্মসূত্রে রাজস্থানে ছিলেন। ফেরার সময় জয়পুর থেকে তিনি মা সরস্বতীর চার ফুটের শ্বেত পাথরের একটি মূর্তি এনেছিলেন। সেই মূর্তি আনার পর তার বাবা উমেশ চন্দ্রের ইচ্ছেতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে। মূর্তি স্থাপিত হয় সেই বছর জুন মাসে স্নানযাত্রার দিনে। সেই হিসেবে ধরলে এখানে সরস্বতী পুজো শতবর্ষ প্রাচীন।
মা সরস্বতীর আশীর্বাদে এই পরিবার শিক্ষার শিখরে পৌঁছেছিল। রণেশ চন্দ্রের ভাই সুরেশ ছিলেন ডাক্তার। এই মন্দিরে তার জন্যই পদার্পণ ঘটেছিল স্বয়ং বিধানচন্দ্র রায়ের। বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন ছিলেন নামজাদা উকিল এবং অন্যজন ছিলেন ওভারসিয়ার।
শুধু সরস্বতী পুজোর দিনই নয়, এই মন্দিরে প্রতিদিনই নিত্য পুজো হয়। বৈশাখ মাসে প্রতিদিন তিন বেলা নিত্য সেবা করা হয় দেবীর। অমলেন্দুর দাবি অনুযায়ী বাংলায় এরকম ঐতিহ্যবাহী এবং নিত্য সেবা রত সরস্বতী মন্দির অন্য কোথাও নেই। পারিবারিক প্রচেষ্টাতে তারা এই ধারা ধরে রেখেছেন আজও, যা এই বছর শতবর্ষের আলোকে উজ্জ্বল ৷