অন্য সমস্ত ব্রতের মধ্যে একাদশী ব্রতকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করা হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জয়া একাদশী ব্রত পালিত হয়। চলতি বছরে ২৩ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এই ব্রত পালিত হচ্ছে। মনে করা হয়, এদিন নিয়ম মেনে পুজো ও উপবাস করলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ সম্ভব হয়। ব্যক্তির ওপর লক্ষ্মীর আশীর্বাদ থাকে ও সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পুরাণ অনুযায়ী, জয়া একাদশীর দিনে শ্রীহরীর নাম জপ করলে পিশাচ যোনির ভয় থাকে না।
জয়া একাদশীর শুভক্ষণ:
একাদশী তিথি শুরু- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে।
একাদশী তিথি সমাপ্ত - ২৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধে ৬টা ০৫ মিনিটে।
ব্রত ভঙ্গের সময়- ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা ৫১ মিনিট থেকে সকাল ৯টা ৯ মিনিট পর্যন্ত।
জয়া একাদশী পুজোর নিয়ম:
১. সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে নিন।
২. পুজোর স্থান পরিষ্কার করে বিষ্ণু ও কৃষ্ণের মূর্তি বা ছবি প্রতিষ্ঠা করুন।
৩. পুজোর সময় কৃষ্ণের ভজন ও বিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ করা উচিত।
৪. প্রসাদে তুলসী, ফল, নারকেল অর্পণ করুন। ফুল অর্পণ করে ধূপকাঠি দেখিয়ে পুজো করুন।
৫. পুজোর সময় মন্ত্র জপ করুন।
৬. দ্বাদশীর সকালে পুজোর পর ব্রত ভঙ্গ করুন।
একাদশীর দিনে যা করবেন না:
- এদিন ভুলেও জুয়া খেলবেন না। ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, এমন করলে ব্যক্তির বংশের নাশ হয়।
- একাদশী ব্রতর দিনে চুরি করা উচতি নয়। এদিন চুরি করলে ৭ পুরুষ সেই পাপের ফল ভোগ করে।
- এদিন সাত্বিক খাওয়া-দাওয়া করুন। ব্যবহারেও বিনম্রতার পরিচয় দিন।
- কঠোর শব্দের ব্যবহার করবেন না। রাগ করবেন না ও মিথ্যে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।
- একাদশীর দিনে সন্ধে বেলা ঘুমানো উচতি নয়।
জয়া একাদশী ব্রত কথা:
একদা দেবরাজ ইন্দ্র নন্দন বনে অপসরাদের সঙ্গে গন্ধর্ব গান গাইছিলেন। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রসিদ্ধ গন্ধর্ব পুষ্পদন্ত, তাঁর কন্যা পুষ্পবতী। চিত্রসেন ও তাঁর স্ত্রী মালিনীও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
এখানেই উপস্থিত ছিলেন মালিনীর পুত্র পুষ্পবান ও তার ছেলে মাল্যবান। গন্ধর্ব গানে তাঁরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানেই গন্ধর্ব কন্যা পুষ্পবতী মাল্যবানকে দেখে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন ও নিজের রূপের ছটায় মাল্যবানকে বশীভূত করেন।
এর পরই চলতে থাকা সুর ও তালের বিপরীতে গিয়ে তাঁরা নিজের মন মতো গান গাইতে শুরু করেন। এঁকে নিজের অপমান মনে করে ইন্দ্র দুজনকেই অভিশাপ দেন। মর্যাদা ভঙ্গের পাশাপাশি দেবরাজের আজ্ঞার অবহেলার অপরাধে, স্ত্রী-পুরুষ হিসেবে মৃত্যুলোকে গিয়ে নিজের কর্মফল ভোগ করার অভিশাপ দেন ইন্দ্র।
ইন্দ্রের অভিশাপের প্রভাবে হিমাচলের পার্বত্য এলাকায় তাঁরা দুঃখে জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করেন। অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। দিন অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কষ্টও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন তাঁরা দেব আরাধনা করে সংযমী জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই মাঘ মাসে শুক্লপক্ষের একাদশী তিথির আগমন ঘটে।
সে দিন উপবাসেই দিন কাটান তাঁরা। সন্ধেবেলা অশ্বত্থ গাছের তলায় নিজের পাপ থেকে মুক্তির উদ্দেশে বিষ্ণুকে স্মরণ করেন। রাত হলেও তাঁরা নিদ্রা যান না। পরের দিন সকালে এরই পুণ্য প্রভাবে পিশাচ যোনি থেকে মুক্তি লাভ করেন ও অপ্সরার নবরূপ লাভ করে স্বর্গলোকে গমন করেন।
সে সময় তাঁদের ওপর পুষ্পবর্ষা হয় ও দেবরাজ ইন্দ্র তাঁদের ক্ষমা করে দেন। এ ব্রত সম্পর্কে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি এই একাদশী ব্রত পালন করে, সে সমস্ত যজ্ঞ, জপ, দান ইত্যাদি সম্পন্ন করে ফেলে। তাই সমস্ত একাদশীর মধ্যে জয়া একাদশীকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।’