কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যা তিথিতে মধ্যরাতে কালী পুজো হয়। এ দিন দীপাবলী উৎসবও পালিত হয়। চলতি বছর ১৪ নভেম্বর কালী পুজো। পুজোর নিশিতা কাল, রাত ১১টা ৩৯ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১২টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। উল্লেখ্য, অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে ১৪ নভেম্বর দুপুর ২টো ১৭ মিনিটে, শেষ হবে ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে।
কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলী ও কালী পুজো দুই-ই পালিত হয়। দীপাবলীর দিন প্রদোষ কালে লক্ষ্মী পুজো করা হয়, অন্য দিকে এ দিন মধ্যরাতেই কালী পুজো করা হয়। মনে করা হয়, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে কালী পুজো করলে বিশেষ সিদ্ধি লাভ সম্ভব হয়। তাই নিজের মনস্কামনা পূরণের জন্য এদিন কালী পুজো করেন অনেকে। এই পুজো শ্যামা পুজো নামেও পরিচিত। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী কালী পুজোর রাত সিদ্ধির রাত। তাই এ রাতে তন্ত্র সাধনাও জোর কদমে করে থাকেন অনেক তান্ত্রিকই।
কালীর উৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। পুরাণ অনুযায়ী, দারুক নামক রাক্ষস ব্রহ্মার আশীর্বাদ লাভ করে দেবতা ও ব্রাহ্মণদের প্রতাড়িত করতে শুরু করে ও স্বর্গলোক দখল করে। এর পর সমস্ত দেবতা বিষ্ণু ও ব্রহ্মার দ্বারস্থ হন। তখন ব্রহ্মা জানান, এক স্ত্রীর মাধ্যমেই দারুকের সংহার সম্ভব। তখন শিবের দ্বারস্থ হন দেবতাগণ।
এর পর পার্বতী নিজের একটি অংশ শিবের মধ্যে সমাহিত করেন। তার পর শিবের কণ্ঠের বিষ থেকে ওই অংশটি আকার ধারণ করে। শিবের তৃতীয় নেত্র থেকে উৎপন্ন হন কালিকা। কালীর কপালে তৃতীয় নেত্র, চন্দ্র রেখা ও গলায় করাল বিষের চিহ্ন ছিল। কালীর ভয়ঙ্কর ও বিশাল রূপ দেখে দেবতারাও পলায়ন শুরু করেন।
এর পর দারুক বধ করেন কালী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর ক্রোধ শান্ত হয় না ও সমগ্র সংসার তাঁর ক্রোধাগ্নিতে ভস্মীভূত হতে শুরু করে। জগৎ রক্ষার জন্য বালক রূপ ধরে শিব শ্মশানে শুয়ে কাঁদতে শুরু করেন। তাঁকে দেখে কালী মোহিত হয়ে যান ও কোলে নিয়ে তাঁকে দুধ পান করান। শিব সে সময় দুধের সঙ্গে সঙ্গে কালীর ক্রোধও পান করেন। শিবের দ্বারা কালীর ক্রোধ পান করার ফলে তিনি মূর্চ্ছিত হয়ে পড়েন। কালীর জ্ঞান ফেরানোর জন্য শিব তাণ্ডব শুরু করেন। জ্ঞান ফিরলে নৃত্যরত শিবকে দেখে কালীও নৃত্য শুরু করেন। এ কারণে তিনি যোগিনী নামে প্রসিদ্ধ।
আবার শ্রীমার্কণ্ডেয় পুরাণ ও দুর্গা সপ্তশতী অনুযায়ী অম্বার ললাট থেকে কালীর উৎপত্তি হয়েছিল। শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক দৈত্য ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের স্বর্গ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। নিজের প্রাণরক্ষার জন্য দেবতারা পলায়ন করলে দুর্গার কথা স্মরণ করেন তাঁরা। এর পর তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুর্গা প্রকট হন ও শুম্ভ-নিশুম্ভের দলের অন্যতম শক্তিশালী অসুর চণ্ড-মুণ্ডের সংহার করেন। এতে ক্ষুব্ধ দৈত্যরাজ শুম্ভ উদাযুদ্ধ নামক দৈত্য সেনাপতি, কম্বু দৈত্যর ৮৪ জন সেনানায়ক, কোটিবীর্য কূলের ৫০, ধৌম্র কূলের ১০০ অসুর, কালক, দৌর্হৃদ, মৌর্য ও কালকেয় অসুরদের সঙ্গে মিলে দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নামে।
শিব অম্বাকে অসুরদের সংহারের জন্য বললে অম্বার শরীর থেকে ভয়ংকর উগ্ররূপ ধারণ করে চণ্ডিকার উৎপত্তি হয়। কালিকা অসুরদের সংহার করেন, চণ্ড-মুণ্ড বধ করেন। এর পর রক্তবীজ সংহারের পরে শুম্ভ-নিশুম্ভকেও বধ করেন দেবী। কিন্তু তা সত্ত্বেও কালীর রাগ শেষ হয় না। তাঁর ক্রোধ শান্ত করার জন্য তখন শিব তাঁর পথে শুয়ে পড়েন ও কালীর পা তাঁর বুকে পড়ে। শিবের বুকের ওপর পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে কালীর ক্রোধ প্রশমিত হয় ও তিনি তাঁর শান্ত রূপে ফিরে আসেন।