এ বছর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পিতৃপক্ষ, শেষ হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। যদিও পঞ্জিকায় পূর্ণিমার মধ্যে ২ সেপ্টেম্বরে শ্রাদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পিতৃপক্ষের অন্যান্য সমস্ত শ্রাদ্ধ শুরু হবে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে।
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি ও তর্পণের জন্য শ্রাদ্ধ করা হয়। এখানে শ্রাদ্ধের অর্থ, শ্রদ্ধাপূর্বক নিজেদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন।
পিতৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তিথি:
পূর্ণিমা শ্রাদ্ধ- ২ সেপ্টেম্বর ২০২০
পঞ্চমী শ্রাদ্ধ- ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
একাদশী শ্রাদ্ধ- ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বপিতৃ অমাবস্যা- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
সনাতন ধারণা অনুযায়ী, যাঁরা দেহত্যাগ করে পরলোকে গমন করেন, তাঁদের আত্মার তৃপ্তির জন্য শ্রদ্ধাপূর্ণ তর্পণ করা হয়, একেই শ্রাদ্ধ বলা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, যম শ্রাদ্ধপক্ষের সময়ে জীবকে মুক্ত করে দেন, যাতে তাঁরা স্বজনদের তর্পণ গ্রহণ করতে আসতে পারেন। পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষরা মৃত্যুলোক থেকে পৃথিবীতে আসেন ও নিজের পরিবারের সদস্যদের আশীর্বাদ দেন। পূর্বপুরুষ প্রসন্ন হলে বাড়িতে সুখ-শান্তি বিরাজ করে।
হিন্দু ধর্মে পিতৃপক্ষের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পিতৃপক্ষের ১৫ দিন পূর্বপুরুষদের সমর্পিত। শাস্ত্র অনুযায়ী, ভাদ্রের পূর্ণিমা থেকে শুরু হয়ে আশ্বিনের অমাবস্যা পর্যন্ত পিতৃপক্ষ বা শ্রাদ্ধপক্ষ পালিত হয়। ভাদ্রপদ পূর্ণিমার দিনে শুধুমাত্র তাঁদেরই শ্রাদ্ধ করা হয়, যাঁদের মৃত্যু বছরের যে কোনও পূর্ণিমা তিথিতে হয়েছিল। শাস্ত্র অনুযায়ী, বছরের যে কোনও পক্ষে, যে তিথিতে পরিজনদের মৃত্যু হয়েছে, সেই তিথিতেই তাঁদের শ্রাদ্ধকর্ম করা উচিত।
তবে অনেক সময়েই পরিজনদের মৃত্যুতিথি মনে না-থাকলে, কবে শ্রাদ্ধকর্ম করা যেতে পারে, সে ব্যাপারেও উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আশ্বিন অমাবস্যার দিনে তর্পণ করা যেতে পারে। তাই এই অমাবস্যাকে সর্বপিতৃ অমাবস্যা বলা হয়। এ ছাড়া, কারও অকাল মৃত্যু হলে, চতুর্দশী তিথিতে তাঁদের শ্রাদ্ধ করা হয়। আবার অষ্টমী তিথিতে বাবা ও নবমী তিথিতে মায়ের শ্রাদ্ধ করা হয়ে থাকে।
তবে কেন এই পিতৃপক্ষ পালিত হয়, সে ব্যাপারেও একটি পৌরাণিক ধারণা প্রচলিত আছে। বলা হয়, মহাভারতের যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যুর পর যখন তাঁর আত্মা স্বর্গে পৌঁছয়, তখন তাঁকে নিয়মিত ভোজনে সোনা ও অলঙ্কার দেওয়া হয়। হতাশ কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিগ্যেস করলে ইন্দ্র জানান, কর্ণ সম্পূর্ণ জীবনে শুধু স্বর্ণালঙ্কারই দান করে গিয়েছেন, কখনও নিজের পূর্বপুরুষদের কিছু দেননি। এতে কর্ণের উত্তর, তাঁর পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এর পর পূ্র্বপুরুষদের ভোজন দানের উদ্দেশে ইন্দ্র তাঁকে ১৫ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন। এই ১৫ দিনের সময়সীমাই পিতৃপক্ষ হিসেবে পালিত হয়।