গণেশ প্রথম পূজ্য দেবতা। গণেশ পুজো না করে অন্য দেব-দেবীর পুজো বা অনুষ্ঠান শুরু হয় না। সনাতন ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল গণেশ চতুর্থী। এই দিনটি আবার বিনায়ক চতুর্থী নামেও পরিচিত। ভাদ্রপদ মাসের চতুর্থী থেকে চতুর্দশী তিথি পর্যন্ত গণেশ উৎসব পালিত হয়। চতুর্দশীর দিনে বিসর্জন হয়। পুরাণ অনুযায়ী গণেশ চতুর্থীর দিনই জন্মগ্রহণ করেন গণেশ।
গণেশ চতুর্থীর তারিখ
চলতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) গণেশ চতুর্থী পালিত হবে। বৈদিক জ্যোতিষ অনুযায়ী গণেশ পুজোর জন্য মধ্যাহ্নের সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। এ সময় বিঘ্নহর্তা গণেশের পুজো করলে ব্যক্তির সমস্ত মনোস্কামনা পূর্ণ হয় এবং কষ্ট মুক্তি ঘটে।
গণেশ চতুর্থীর শুভক্ষণ
চতুর্থী তিথির সূচনা- শুক্রবার ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১৮ মিনিটে।
চতুর্থী তিথির সমাপ্তি- শুক্রবার ১০ সেপ্টেম্বর, রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে।
পুজোর শুভক্ষণ- মধ্যাহ্ন কাল ১১টা ০৩ মিনিট থেকে ১টা ৩৩ মিনিট পর্যন্ত। মোট ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
এদিন ভুলেও দেখবেন না চাঁদ
গণেশ চতুর্থীর দিন চাঁদ দেখা উচিত নয়। মনে করা হয় এর ফলে মিথ্যা অভিযোগ, কলঙ্ক লাগতে পারে। উল্লেখ্য, গণেশ চতুর্থী আবার কলঙ্ক চতুর্থী, কলঙ্ক চৌথ ও পাথর চৌথ নামেও পরিচিত।
কেন চাঁদ দেখতে নেই
পুরাণ অনুযায়ী, একদা গণেশ তাঁর বাহন মুষকের ওপর সওয়ার হয়ে খেলা করছিলেন। তখন মুষকরাজ সাপ দেখেন। তা দেখে মুষক ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে এবং তার পিঠে সওয়ার গণেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। গণেশ তখন ঘুরে ফিরে দেখা শুরু করেন যে, তাঁকে কেউ দেখছে কী না। রাতের সময় হওয়ায় আশপাশে কেউ উপস্থিত ছিল না, কিন্তু তখনই জোরে জোরে হাসির শব্দ কানে আসে গণেশের। চন্দ্রের হাসির শব্দ ছিল এটি। চন্দ্র গণেশের উপহাস করে বলেন যে, ছোট শরীর এবং হাতির মুখ! এটি শুনেই গণেশ ক্ষুব্ধ হয়ে যান এবং তিনি চন্দ্রকে অভিশাপ দিয়ে বসেন। গণেশ বলেন, ‘যে সৌন্দর্যের অভিমানের কারণে তুমি আমার উপহাস করছ, সেই সৌন্দর্য শীঘ্র নষ্ট হয়ে যাবে।’ গণেশের অভিশাপের কারণে চন্দ্রের রঙ কালো হয়ে যায় এবং জগৎ অন্ধকার হয়ে পড়ে। তখন সমস্ত দেবী-দেবতা গণেশকে বোঝান এবং চন্দ্র নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
চন্দ্রদেবকে ক্ষমা করে গণেশ বলেন যে, ‘আমি নিজের অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে পারব না। কিন্তু মাসে একদিন আপনার রঙ পুরো কালো হয়ে যাবে এবং তার পর প্রতিদিন ধীরে ধীরে আকার বৃদ্ধি পাবে। মাসে একবার পূর্ণ রূপে দেখা যাবেন।’ প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী তখন থেকে চন্দ্রের আকার পরিবর্তন হতে শুরু করে। এর পর গণেশ আরও বলেন যে, ‘আমার অভিশাপের কারণে আপনি দেখা অবশ্যই যাবেন, তবে গণেশ চতুর্থীর দিনে যে ভক্ত আপনার দর্শন করবে, সে অশুভ ফল লাভ করবে।’
গণেশ চতুর্থীর দিনে চাঁদ না-দেখার সময়
দ্রিকপঞ্জিকা অনুযায়ী গণেশ চতুর্থীর রাত ৯টা ১২ মিনিট থেকে শুরু করে সকাল ৮টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত চাঁদ দেখা উচিত নয়।