প্রতিমাসে দুবার একাদশী পালিত হয়। শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে এই ব্রত পালিত হয়। বছরে মোট ২৪টি একাদশী থাকে। বিষ্ণুকে সমর্পিত এই দিনটি। ধর্মে এই ব্রতর গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে পাপমোচিনী একাদশী বলা হয়। এই একাদশী ব্রত পালন করলে সমস্ত ধরণের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ বছর বুধবার, ৭ এপ্রিল পাপমোচিনী একাদশী।
শুভক্ষণ:
একাদশী তিথি শুরু- ৭ এপ্রিল ভোররাত ২টো বেজে ০৯ মিনিটে।
একাদশী তিথি সমাপ্ত- ৮ এপ্রিল ভোররাত ২টো ২৮ মিনিটে।
হরিবাসর সমাপ্তি- ৮ এপ্রিল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে।
ব্রতভঙ্গের সময়- ৮ এপ্রিল দুপুর ১টা ৩৯ মিনিট থেকে সন্ধে ৪টে ১১ মিনিট পর্যন্ত।
জানুন এ দিন কী করবেন ও কী করবেন না-
- এ দিনে বিষ্ণুর পুজো করা উচিত। সম্ভব হলে উপবাস করুন। আবার বিষ্ণুর পাশাপাশি লক্ষ্মীর পুজো করা উচিত। বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর পুজো করলে সমস্ত ধরণের মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
- এদিন সাত্বিক ভোজন গ্রহণ ও আমিষ এবং মদ্যপান ত্যাগ করা উচিত। একাদশীর দিনে ভাত খেতে নেই।
- এদিন কারও সম্পর্কে অপশব্দ ব্যবহার করবেন না। ব্রহ্মচর্য পালন করা উচিত এদিন।
- একাদশীর দিনে দান-পুণ্য করা ভালো।
- একাদশীর দিনে বিষ্ণুকে ভোগ নিবেদন করুন। এই ভোগে তুলসীপাতা দিতে ভুলবেন না।
পাপমোচিনী একাদশীর পৌরাণিক কাহিনি:
প্রাচীন কালে চৈত্ররথ নামক এক সুন্দর বন ছিল। এই বনে তপস্যা করতেন চ্যবন ঋষির পুত্র মেধাবী ঋষি। এই বনেই গন্ধর্ব কন্যা, অপ্সরা ও দেবতাদের সঙ্গে বিচরণ করতেন দেবরাজ ইন্দ্র। মেধাবী ঋষি শিবভক্ত ছিলেন। শিবদ্রোহী কামদেবের অনুচরী ছিলেন অপ্সরারা। তাই এক সময় মেধাবী ঋষির তপস্যা ভঙ্গের জন্য মঞ্জুঘোষা নামক এক অপ্সরাকে পাঠান কামদেব। নিজের নৃত্য ও সঙ্গীত কলা এবং সৌন্দর্যের সাহায্যে মেধাবী মুনির ধ্যান ভঙ্গ করে দেন ওই অপ্সরা। এর পরই তিনি মঞ্জুঘোষার রূপে মোহিত হয়ে যান। বহুবছর মঞ্জুঘোষার সঙ্গে বিলাসিতার জীবন কাটান মেধাবী ঋষি। দীর্ঘ সময় পর যখন মঞ্জুঘোষা ফিরে যাওয়ার অনুমতি চান, তখন নিজের ভুল বুঝতে পারেন তিনি। তপস্যা ভঙ্গের আত্মজ্ঞান হয় তাঁর।
মঞ্জুঘোষা কী ভাবে তাঁর তপস্যা ভঙ্গ করেছে, এ বিষয় জানতে পারলে ক্ষুব্ধ মেধাবী ঋষি তাঁকে পিশাচিনী হওয়ার অভিশাপ দিয়ে বসেন। এর পরই ঋষির পায়ে পড়ে শাপমুক্তির উপায় জানতে চান ওই অপ্সরা। তখন মেধাবী ঋষি তাঁকে পাপমোচিনী একাদশী ব্রত পালন করতে বলেন। তিনি জানান যে, এই ব্রত পালন করলে তাঁর পাপস্খলন হবে এবং তিনি পূর্বের রূপ ফিরে পাবেন। অপ্সরাকে মুক্তির পথ জানিয়ে নিজের পিতার কাছে পৌঁছন মেধাবী মুনি। অভিশাপ সম্পর্কে জানতে পেরে ঋষি চ্যবন বলেন যে, ‘হে পুত্র, তুমি এটা ভালো করনি। তুমিও পাপ করেছ। তাই তুমিও পাপমোচিনী একাদশী ব্রত পালন কর।’ এই ব্রত পালন করে মঞ্জুঘোষা ও মেধাবী ঋষি উভয়েই পাপমুক্ত হন।