প্রতি বছর ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী পালিত হয়। বিবেকানন্দের জন্মদিনটি দেশে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছোটবেলার নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। নরেন্দ্রনাথ খুব অল্প বয়সেই আধ্যাত্মিকতার পথ অবলম্বন করেছিলেন। আধ্যাত্মিক পথ অবলম্বন করার পর তিনি স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন আইনজীবী এবং মা ছিলেন একজন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মহিলা। স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর রামকৃষ্ণ মিশন, রামকৃষ্ণ মঠ এবং এর অনেক শাখা কেন্দ্রে পালিত হয়। এটি আধুনিক ভারতের স্থপতি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন স্মরণ করার জন্য উদযাপিত হয়। চলুন জেনে নিই স্বামী বিবেকানন্দের সাথে সম্পর্কিত কিছু মজার এবং প্রেরণাদায়ক ঘটনা।
অল্প বয়স থেকেই স্বামী বিবেকানন্দ আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পড়াশোনায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও অল্প বয়সে তার গুরুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি জাগতিক আসক্তি ত্যাগ করেন এবং সন্ন্যাসী হন। অবসর গ্রহণের পর তার নাম রাখা হয় বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৭ সালে কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। একই সময়ে, ১৮৯৮ সালে, গঙ্গা নদীর তীরে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মঠও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় বিশ্ব ধর্ম সাধারণ পরিষদের আয়োজন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এখানে তিনি হিন্দিতে আমেরিকা ভাই ও বোনেরা বলে বক্তৃতা শুরু করেন। বিবেকানন্দের ভাষণে শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে পুরো দুই মিনিট করতালি ধ্বনিত হয়েছিল, যা ভারতের ইতিহাসে গৌরব ও সম্মানের ঘটনা হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই ভাষণের পর বিশ্ববাসী তার আধ্যাত্মিক চিন্তা ও দর্শনে মুগ্ধ হয়।
বিবেকানন্দ প্রায়ই একজন সাধারণ সন্ন্যাসীর পোশাক পরতেন। একদিন এই কাপড় পরে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তার পোশাক একজন বিদেশীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই বিদেশী বিবেকানন্দর পাগড়ি টেনে নিয়েছিল। বিদেশীর এই কর্মকাণ্ডের পর স্পষ্ট ইংরেজিতে এমন করার কারণ জিজ্ঞেস করলে বিদেশি অবাক হয়ে যান। সেই বিদেশী বুঝতেই পারলেন না যে, সন্ন্যাসী রূপে এই ব্যক্তি এত ভালো ইংরেজি জানেন কী করে। তারপর তিনি বিবেকানন্দকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি শিক্ষিত? তখন স্বামী বিবেকানন্দ বিনয়ের সাথে বললেন, হ্যাঁ, আমি শিক্ষিত এবং একজন ভদ্রলোক। তখন বিদেশি বলল তোমার জামাকাপড় দেখে তো মনে হয় না তুমি ভদ্রলোক। এর উত্তরে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আপনার দেশে একজন দর্জি একজন মানুষকে ভদ্রলোক করে, কিন্তু আমার দেশে একজন মানুষের আচরণ তাঁকে ভদ্রলোক করে। এমন উত্তর শুনে বিদেশী বিব্রতবোধ করলেন এবং নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।