৫ অগস্ট, বৃহস্পতিবার প্রদোষ ব্রত। বৃহস্পতিবার যে প্রদোষ ব্রত পালিত হয় তা গুরু প্রদোষ ব্রত নামে পরিচিত। প্রতিমাসের কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীর দিনে প্রদোষ ব্রত পালিত হয়। এই ব্রতর প্রভাবে সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করা যায় এবং মনোস্কামনা পূরণ হয়।
প্রদোষ ব্রতর পুজোয় শিব-পার্বতীর পুজো করা হয়। এই পুজোর শেষে ব্রতকথা পাঠ বা শোনার বিধান রয়েছে। এর প্রভাবে শুভ ফল লাভ করা যায়। কোন সময় প্রদোষ ব্রতর পুজো করবেন না জানুন এখানে—
আজকের অশুভ সময়
রাহুকাল- দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টে।
যমগণ্ড- সকাল ৬টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
গুলিক কাল- সকাল ৯টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত।
দুর্মুহূর্ত কাল- সকাল ১০টা ১৩ মিনিট থেকে ১১টা ০৬ মিনিট পর্যন্ত। এর পর দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিট থেকে ৪টে ২৮ মিনিট পর্যন্ত।
বর্জ্য কাল- দুপুর ১টা ৩৬ মিনিট থেকে ৩টে ২০ মিনিট পর্যন্ত।
গুরু প্রদোষ ব্রতকথা
একদা চন্দ্র ও বৃত্তাসুরের সেনার মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। দৈত্য-সেনাকে পরাজিত করে তাদের নষ্ট করে দেন দেবতারা। তা দেখে ক্ষুব্ধ বৃত্তাসুর স্বয়ং যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়। মায়ার সাহায্যে সে বিশাল রূপ ধারণ করে। ভীত দেবতারা বৃহস্পতির শরণে পৌঁছন। তখন বৃহস্পতি বলেন, ‘প্রথমে আমি তোমাদের বৃত্তাসুরের আসল পরিচয় জানিয়ে দিই।’
বৃত্তাসুর তপস্বী এবং কর্মনিষ্ঠ। গন্ধমাদন পর্বতে ঘোর তপস্যা করে শিবকে প্রসন্ন করে সে। পূর্বজন্মে চিত্ররথ নামক রাজা ছিল সে। একদা নিজের বিমানে কৈলাশ পর্বতে যায়। সেখানে শিবের বাম অঙ্গে পার্বতীকে দেখএ উপহাস করে বলেন, - ‘হে প্রভু! মোহ-মায়ায় জড়িয়ে থাকার কারণে আমরা মহিলাদের বশে থাকি। কিন্তু দেবলোকে এমন দেখা যায়নি যে স্ত্রী আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে সভায় বসে রয়েছে।’
চিত্ররথের এই কথা শুনে শিব, হেসে বলেন, - ‘হে রাজা! আমার দৃষ্টিকোণ পৃথক। আমি মৃত্যুদাতা-কালকূট মহাবিষ পান করেছি, তা সত্ত্বেও তুমি সাধারণ মানুষের মতো আমার উপহাস করতে পারছ।’ ক্ষুব্ধ পার্বতী চিত্ররথকে বলেন - ‘দুষ্ট! তুই সর্বব্যাপী মহেশ্বরের সঙ্গে আমার উপহাস করেছিস। আমি তোকে এমন শিক্ষা দেব, যাতে তুই আবার সন্তদের উপহাস করার দুঃসাহস করতে না-পারিস। তুই দৈত্য স্বরূপ ধারণ করে বিমান থেকে নীচে পড়ে যা, আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি।’
এই অভিশাপের কারণে রাক্ষস যোনি লাভ করেন চিত্ররথ এবং ত্বষ্টা নামক ঋষির শ্রেষ্ঠ তপ থেকে উৎপন্ন হয়ে বৃত্তাসুন নাম ধারণ করে। বৃহস্পতি বলেন, - ‘বাল্যকাল থেকে শিবভক্ত ছিল বৃত্তাসুর। অতএব হে ইন্দ্র! তুমি বৃহস্পতি প্রদোষ ব্রতকে শিবকে প্রসন্ন কর।’ এর পর বৃহস্পতি প্রদোষ ব্রত পালন করেন ইন্দ্র। এর পর শীঘ্র বৃত্তাসুরের ওপর জয় লাভ করেন এবং দেবলোকে শান্তি বিরাজ করে। অতএব সমস্ত শিব ভক্তকে প্রদোষ ব্রত করা উচিত।