পিতৃপক্ষের শেষ দিন, অর্থাৎ সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা বিসর্জনী অমাবস্যা অথবা মহালয়ার দিনে তর্পণ ও শ্রাদ্ধ করে মর্ত্যে আগত পূর্বপুরুষদের বিদায় জানানো হয়। এদিনই পিতৃলোকে ফিরে যান পূর্বপুরুষরা। তবে কেন ও কীভাবে তর্পণ করা হয়, তা জেনে নেওয়া ভালো। আবার এই তর্পণ শব্দটির উৎপত্তিই বা কোথা থেকে তা-ও জেনে নিন।
তর্পণ শব্দের উৎপত্তি ত্রুপ থেকে। ত্রুপ কথার অর্থ সন্তুষ্ট করা। ঈশ্বর, ঋষি ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল নিবেদন করে তাঁদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পণ বলা হয়। শাস্ত্র মতে, যে কাজ দ্বারা অপরের তৃপ্তি হয়, তা-ই তর্পণ।
এবার প্রশ্ন আসে তর্পণ করার কারণ কী?
তর্পণের সময় ঈশ্বর, পূর্বপুরুষদের আত্মার নাম উচ্চারণ করে তাঁদের সুখ-শান্তি কামনা করা হয়। জীবনযাপনের জন্য, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় ব্যক্তি প্রাণী বধ, হিংসা ইত্যাদি নানান অপ্রীতিকর কাজ করে থাকে। এটি ছাড়াও অন্যান্য অপকর্মের জন্যও শাস্ত্রমতে পাপগ্রস্ত হয় ব্যক্তি। সনাতন ধর্মে, এই পাপমোচনের জন্য তর্পণের কথা বলা হয়।
তর্পণের সময় যে মন্ত্র পাঠ করা হয়, তার অর্থ হল—বৃক্ষ থেকে তৃণ শিখা পর্যন্ত সমস্ত জীবজগৎ মদ্দত্ত জল দ্বারা তৃপ্ত হোক, এই প্রার্থনা। উল্লেখ্য, মা-বাবা জীবিত থাকা কালীন প্রেত তর্পণ ছাড়া অন্য কোনও তর্পণ করতে নেই।
তর্পণের নিয়ম
তর্পণ করার আগে নিজেকে জল দিয়ে শুদ্ধ করবেন এবং সেই জলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠ করে শুদ্ধ করবেন। তার পর সেই জল দিয়ে তর্পণ কাজ করবেন।
তর্পণের সামগ্রী
এর জন্য কুশিতে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জল, চন্দন, তিল, তুলসী পাতা, ত্রিপত্রী দিয়ে তর্পণ করতে হয়।
মনে রাখা বাবা ও মায়ের তর্পণের সময় জল, তিল, চন্দন, তুলসী পাতা, ত্রিপত্রী ও অন্যান্য তর্পণের সময় ও অন্যান্য তর্পণের সময় তিলের পরিবর্তে ধান বা যব ব্যবহার করবেন। চন্দন, তিল, যব না-থাকলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পাতা দিয়ে তর্পণ করুন।
তিল তর্পণ
এ ক্ষেত্রে পূর্রুষদের উদ্দেশে তিল ও জল এক সঙ্গে অর্পণ করতে হয়। পিতৃ তর্পণের সময় তিল ব্যবহার করতে ভুলবেন না। সাদা ও কালো—দু ধরনের তিল হয়। তবে শ্রাদ্ধে কালো তিল ব্যবহার করা উচিত। যত জনের জন্য শ্রাদ্ধ করবেন, তাঁদের প্রত্যেকের উদ্দেশে পৃথক পৃথক তিল ব্যবহার করা উচিত।
তিল না থাকলে শুধু কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাছের জলে তুলসী পাতা দিয়ে তর্পণ করা যায়।
তিল তর্পণের উদ্দেশ্য
তিল ব্যবহার করলে নেতিবাচক বা অশুভ শক্তি শ্রাদ্ধকারির মাঝে প্রবেশ করতে পারে না। শ্রাদ্ধের দিন বাড়িতে তিল ছেটাতে হয়। জলের সঙ্গে তিল মিশিয়ে আগত ব্রাহ্মণদের খেতে দিতে হয়। আবার শ্রাদ্ধ শেষে তিল দান করা উচিত।
তর্পণের প্রকারভেদ
- পিতৃ তর্পণ
- মাতৃ তর্পণ
- গুরু তর্পণ
- ঋষি তর্পণ
- দিব্য পিতৃ তর্পণ
- যম তর্পণ
- ভীষ্ম তর্পণ
- বাম তর্পণ
- লক্ষণ তর্পণ
- শূদ্র তর্পণ
তর্পণের সময়
অমাবস্যা তিথিতে তর্পণ করা হয়। চলতি বছর অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ৫ অক্টোবর সন্ধে থেকে, শেষ হবে ৬ অক্টোবর দুপুরে। উদয়া তিথই মেনে ৬ অক্টোবর মহালয়া ও তর্পণ করা হবে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে
অমাবস্যা তিথি শুরু
বাংলা– ১৮ আশ্বিন, মঙ্গলবার।
ইংরেজি– ৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার।
সময়– সন্ধ্যা ৭টা ০৬ মিনিট।
অমাবস্যা তিথি শেষ
বাংলা– ১৯ আশ্বিন, বুধবার।
ইংরেজি– ৬ অক্টোবর, বুধবার।
সময়– বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিট।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে
অমাবস্যা তিথি শুরু
বাংলা– ১৮ আশ্বিন, মঙ্গলবার।
ইংরেজি– ৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার।
সময়– সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড।
অমাবস্যা তিথি শেষ
বাংলা– ১৯ আশ্বিন, বুধবার।
ইংরেজি– ৬ অক্টোবর, বুধবার।
সময়– সন্ধ্যা ৫টা ৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড।
অমাবস্যা তিথিতে ৬ অক্টোবর পিতৃ তর্পণ ও শ্রাদ্ধ কর্ম করা যাবে। এদিন দুপুরের মধ্যে তর্পণ করে নেওয়া উচিত। ভোরবেলা স্নান করে তর্পণ করা সবচেয়ে ভালো।