বছরে মোট ১২টি সংক্রান্তির মধ্যে মেষ, কর্কট, তুলা ও মকর সংক্রান্তি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পৌষ মাসে সূর্যের ধনু থেকে মকর রাশিতে প্রবেশই মকর সংক্রান্তি রূপে পালিত হয়। সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত মাঙ্গলিক কাজ, যেমন- বিবাহ, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এ সময় সূর্যের দক্ষিণায়ন সমাপ্ত হয় ও উত্তরায়ণের সূচনা হয়।
দৃক পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সংক্রান্তি পালিত হবে। সকাল ৮টা ৩০ নাগাদ মকর রাশিতে প্রবেশ করবে সূর্য। মকর সংক্রান্তির পুণ্যকাল থাকবে ৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট পর্যন্ত। পুণ্যকালের সময় হল, সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধে ৫টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত। আবার মহাপুণ্য কালের সময়সীমা হচ্ছে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল সোয়া দশটা পর্যন্ত।
মকর সংক্রান্তির দিন দান, স্নান ও সূর্য আরাধনার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এদিন সূর্যকে লাল বস্ত্র, গম, গুড়, মুসুর ডাল, তামা, সোনা, সুপুরি, লাল ফুল, নারকেল, দক্ষিণা ইত্যাদি অর্পণ করা উচিত। মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্যকালে দান করলে অক্ষয় ফল ও পুণ্য লাভ হয়।
শাস্ত্র মতে, সূর্য যখন দক্ষিণায়নে থাকেন, তখন সেই ৬ মাস দেবতাদের রাত ও উত্তরায়ণের ৬ মাস দেবতাদের দিন হিসেবে বিবেচ্য। দক্ষিণায়নকে অন্ধকার ও অশুভ প্রতীক মনে করা হয়। আবার উত্তরায়ণ শুভ এবং প্রকাশের প্রতীক। উত্তরায়ণের গুরুত্ব বর্ণনা করে কৃষ্ণ গীতার অষ্টম অধ্যায় বলেছেন, ৬ মাস যখন ভাস্কর দেব উত্তরায়ণে থাকেন, তখন পৃথিবী আলোকিত হয়। এই প্রকাশের মধ্যে দেহত্যাগ করলে ব্যক্তির পুনর্জন্ম হয় না এবং সে ব্রহ্ম লাভ করে। অন্যদিকে সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় দেহত্যাগ করার ফলে ব্যক্তির পুনর্জন্ম হয়। মকর সংক্রান্তির দিনে যজ্ঞের আহুতি গ্রহণের জন্য দেবতা স্বয়ং মর্ত্যে আসেন। তখন এই পথেই পু্ণ্যাত্মারা শরীর ত্যাগ করে স্বর্গলোকে প্রবেশ করেন।
এদিন সূর্য শনির সঙ্গে দেখা করতে স্বয়ং তাঁর গৃহে প্রবেশ করেন। শনি মকর রাশির অধিপতি হওয়ায়, সূর্যের প্রভাবের ফলে শনি দুর্বল হয়ে পড়ে। মকর সংক্রান্তির দিনে সূর্য-শনির সাধনা ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত দানরে ফলে শনিজনিত দোষ দূর হয়।
আবার মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গা স্নানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শাস্ত্র মতে, মকর সংক্রান্তির দিনই বিষ্ণুর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ থেকে নির্গত গঙ্গা ভগীরথের পিছন পিছন কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছন। কপিল মুনির আশ্রম থেকেই সাগরে মিশে যান গঙ্গা। সে সময় গঙ্গা ভগীরথের পূর্বপুরুষ মহারাজ সগরের পুত্রদের মুক্তি প্রদান করেন। তাই গঙ্গা ও গঙ্গাসাগরে স্নানের গুরুত্ব অপরিসীম। আবার অন্য এক পৌরাণিক ধারণা অনুযায়ী, পিতামহ ভীষ্ম মহাভারত যুদ্ধ শেষে সূর্যের উত্তরায়ণের অপেক্ষা করেন ও মকর সংক্রান্তিতে প্রাণ ত্যাগ করেন। এ-ও মনে করা হয় যে, কৃষ্ণকে সন্তান রূপে পাওয়ার জন্য যশোদা এ দিন উপবাস করেছিলেন।
পদ্মপুরাণ অনুযায়ী উত্তরায়ণ বা দক্ষিণায়ন শুরুর সময় যে পুণ্য কর্ম করা হয়, তা অক্ষয় হয়। মকর সংক্রান্তির দিন সূর্যোদয়ের পূর্বে স্নান করা উচিত। এমন করলে ১০ হাজার গৌদানের সমান ফল লাভ হয়। এ সময়ের তর্পণ, দান ও দেব আরাধনা অক্ষয় হয়। এ সময় যে কোনও তীর্থ, নদী বা সমুদ্রে স্নান করে দান-পুণ্য করে কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে প্রয়াগরাজ সঙ্গমে স্নানের ফলে মোক্ষ লাভ সম্ভব।