শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে পূজিতা হন দেবী চন্দ্রঘণ্টা। দেবীর এই রূপ অন্যান্য রূপের থেকে অনেকটাই আলাদা। কাশীতে রয়েছে দেবী চন্দ্রঘণ্টার মন্দির।ভক্তদের বিশ্বাস, কাশীতে দেবী চণ্ডঘণ্টা দেবীকে পুজো করে প্রসন্ন করতে পারলে, যম-ঘণ্টা যা কিনা যমের বাহন মহিষের গলায় বাঁধা থাকে, তার ধ্বনিও আর ভয় দেখাতে পারে না। দেবীর কৃপায় মহাপাপীও নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারেন। এই দেবীর কৃপায় নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা যায়।
কেমন রূপ দেবী চন্দ্রঘণ্টার ?
মা চন্দ্রঘণ্টা দেবীর হাতের ঘন্টায় ঐরাবতের শক্তিনিহিত আছে, এই ঘন্টাধ্বনি সব অমঙ্গলকে দুর করতে পারে ৷ বোধহয় এই ধারণা থেকেই মঙ্গলকার্য্যে ঘন্টা বাজানোর রেওয়াজ ৷
দেবী চন্দ্রঘন্টা দশভূজা, সিংহবাহনা, কোথাও কোথাও ব্যাঘ্র-বাহনা ৷ মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ও দেবী আদিশক্তি পুনরায় এই রূপ ধরেন ৷ এই ঘন্টা ইন্দ্রদেব প্রদত্ত, ঘন্টাটি ঐরাবতের গলায় ছিল ৷ এই যুদ্ধের আগে দেবতারা মা আদিশক্তিকে তাঁদের নিজ নিজ দিব্যাস্ত্র প্রদান করেন ৷ এমনটাই বলা হয় ৷ কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যায়, দেবতাদের দিব্যাস্ত্রের শক্তিও দেবী আদিশক্তিরই শক্তি ৷ মায়ের ব্রহ্মচারিণী রূপেই দেবতারা প্রমান পেয়েছিলেন যে তিনি না চাইলে পাতাটিও হেলবে না ৷ তাই তাঁকে অস্ত্র দেওয়া বিষয়টি অনেকটা ‘গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর’ মতোই ৷
আরও পড়ুন: (পুজোয় সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণের ইচ্ছে ? দীঘা, মন্দারমণির বদলে যেতে পারেন এখানে)
আরও পড়ুন: (অফবিট জায়গা পছন্দের? পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন এই সুন্দর স্থান দুয়ারসিনিতে)
বারাণসীতে লক্ষ্মী চৌতারার চন্দুনাউয়ের গলিতে মা দেবী চন্দ্রঘণ্টার মন্দির রয়েছে। মায়ের এই রূপের পুজো করলে সাধকের মহাপাপ বিনাশ হয়, তাঁর ঘন্টাধ্বনিতে সব বিপদ বা অশুভ শক্তি পলায়ন করে ৷ মৃত্যুকালে যমরাজের বাহন মহিষের গলার ঘন্টাধ্বনিও ভক্তকে ভীত করতে পারে না ৷ তাই সৌভাগ্য লাভের জন্য মায়ের এইরূপের পুজো করতে হয় ৷ এই রূপ চণ্ডঘন্টা, বা চণ্ডিকা নামেও পরিচিত ।
আরও পড়ুন: (পুজোর আগে বাড়ি গোছানোর তোড়জোড় ? এই টিপসে রুম হয়ে উঠবে আরও সুন্দর)
২০২৪ সালের সময়সূচি ও শুভ রং:
২০২৪ সালের ৫ই অক্টোবর নবরাত্রির তৃতীয় দিন। রাত ৯টা ৩৩ পর্যন্ত এইদিনের পুজোর সময় রয়েছে। তবে পঞ্জিকা মতে পুজার্চনার কাজ সন্ধে ৭টার মধ্যে শেষ করা মঙ্গলজনক। রুদ্র এই মূর্তির প্রতীক হিসাবে এইদিন লাল রঙ শুভ। লাল রঙের পোশাক পরলে দেবী প্রসন্ন হবে বলে মনে করা হয়।
ভোগ:
ভক্তরা এইদিন দেবীকে উৎসর্গ করে পায়েস নিবেদন করে থাকেন । এটা বিশ্বাস করা হয়, এই নৈবেদ্য বাধা অতিক্রম করার সাহস এবং শক্তি প্রদান করে। তাই মায়ের ভোগ নিবেদন করতে হয় দুগ্ধজাত খাদ্যের মাধ্যমে (ক্ষীর, পায়েস, ছানা, মিষ্টি ইত্যাদি ) ৷ ক্ষীর বা পায়েস মাকে অবশ্যই নিবেদন করতে হয়।
দেবীর পূজার মন্ত্র:
আপদুদ্ধারিণী ত্বং হি আদ্যাশক্তিঃ শুভা পরা ।
অণিমাদিসিদ্ধিদাত্রি চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥
চন্দ্রমুখী ইষ্টদাত্রী ইষ্টমন্ত্রস্বরূপণী ।
ধনদাত্র্যানন্দদাত্রী চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥
নানারূপধারিণী ইচ্ছাময়ী ঐশ্বর্যদায়নী ।
সৌভাগ্যারোগ্যদায়নী চন্দ্রঘণ্টে প্রণমাম্যহম্ ॥