হিন্দু সংস্কৃতিতে শ্রাদ্ধের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শ্রাদ্ধ অর্থাৎ, শ্রদ্ধা-সহ সেই কাজ, যা পূর্বপুরুষদের সন্তুষ্ট করে। ভাদ্র মাসের পূণির্মা থেকে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত পক্ষকে শ্রাদ্ধ পক্ষ বলা হয়। এই পক্ষে ব্যক্তির যে তিথিতে মৃত্যু হয়েছিল, সেই তিথিতে সেই মৃত ব্যক্তির পুত্র-পৌত্র দ্বারা শ্রাদ্ধকর্ম করা হয়। এর ফলে পূর্বপুরুষরা সন্তুষ্ট হন এবং পরিজনদের দীর্ঘায়ু, আরোগ্য, ধন-সম্পত্তি, স্বর্গ লাভের জন্য আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন।
ঋষি মার্কণ্ডেয় বলেন যে, পিতৃ সূক্ষ্ম স্বরূপে শ্রাদ্ধ তিথিতে নিজের সন্তানের গৃহ দ্বারে সূর্যোদয় থেকে এসে অবস্থান করেন। পুত্র-পৌত্রের কাছ থেকে ভোজন লাভের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু সূর্যাস্ত হওয়া পর্যন্ত পিতৃপুরুষরা ভোজন লাভ না-করায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দিয়ে ফিরে যান। তাই শাস্ত্রে শ্রাদ্ধ করাকে অনিবার্য বলা হয়েছে। দেবতাদের পূর্বে পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করা অধিক কল্যাণকারী। শাস্ত্র মতে, মৃত্যুর পর ঔর্ধ্বদৈহিক সংস্কার, পিণ্ডদান, তর্পণ, শ্রাদ্ধ, একাদশাহ, সপিণ্ডীকরণ, অশৌচাদি নির্ণয়, কর্মবিপাক ইত্যাদি দ্বারা পাপ বিধানের প্রায়শ্চিত্ত করা হয়।
বাস্তু অনুযায়ী শ্রাদ্ধের নিয়ম
শাস্ত্র মতে, দক্ষিণ দিকে চন্দ্রের ওপরের কক্ষে পিতৃলোক অবস্থিত। বাস্তুতে দক্ষিণ দিককে পিতৃপুরুষদের দিক মনে করা হয়। তাই দক্ষিণ দিকে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা হয়। যে তিথিতে শ্রাদ্ধকর্ম করতে হবে, সেদিন সূর্যোদয় থেকে শুরু করে ১২টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ-তর্পণ করুন।
শ্রাদ্ধ করার সময় দুধ, গঙ্গাজল, মধু, বস্ত্র, কুশ, তিল, অনিবার্য। তুলসী দিয়ে পিণ্ডদান করলে পূর্বপুরুষরা সম্পূর্ণ প্রসন্ন হয়ে আশীর্বাদ দেন। যে কক্ষে পিতৃপুজো করা হবে, তা যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। বাস্তু মতে, এই কক্ষের দেওয়াল হতে হবে হাল্কা হলুদ, গোলাপী, সবুজ বা বেগুনীর মতো আধ্যাত্মিক রঙ। কারণ এই রঙ আধ্যাত্মিক শক্তির স্তর বৃদ্ধি করে। কালো, নীল, বাদামীর মতো তামসিক রঙের দেওয়াল না-থাকাই ভালো।
বাস্তুতে দক্ষিণকে পিতৃপুরুষদের ক্ষেত্র গণ্য করা হয়। তাই তর্পণের সময় মুখ থাকতে হবে দক্ষিণ দিকে। তর্পণের সময় অগ্নির স্থান হবে পুজোস্থলের আগ্নেয় অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব কোণে। এই দিকটি অগ্নিতত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এ দিকে অগ্নি সংক্রান্ত কাজ করলে শত্রু পরাজিত হয়, রোগ, কলহ দূর হয়। বাড়িতে সুখ-সমৃদ্ধির বাস হয়। শ্রাদ্ধ ভোজের সময় ব্রাহ্মণের মুখ থাকতে হবে দক্ষিণ দিকে। এর ফলে পিতৃ সন্তুষ্ট হন।