পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ইংরেজবাজার থানার একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম হল এই রামকেলি। ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া না গেলেও কথিত আছে যে রামচন্দ্র তার শ্বশুরবাড়ি মিথিলা যাওয়ার সময় তখনকার নাম পুণ্ড্রুদেশ বর্তমানে মালদাতে কিছুদিন দিন যাপন করেছিলেন। সেখানে কালিন্দী নদীর তীরে আমবাগানে রামচন্দ্র আমের স্বাদে গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ফলকেলি শুরু করেছিলেন। রামচন্দ্র আম নিয়ে কেলি করায় এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় রামকেলি।
বৃন্দাবন দাস রচিত চৈতন্য ভাগবতেও এই গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৫১৪ সাধারন অব্দে মতান্তরে ১৫১৫ শ্রীচৈতন্যদেবের রামকেলি গ্রামে আগমন হয়। ভক্তি ধর্ম প্রচারে শ্রী চৈতন্যদেব বেরিয়েছিলেন দাক্ষিণাত্য উড়িষ্যায়। সেখান থেকে মথুরা বৃন্দাবন যাওয়ার পথে গৌড়ে আসেন তিনি। তখন রামকেলি গ্রামে তিনি দিন তিনেক ছিলেন। সময়টা ছিল জুন মাসের মাঝামাঝি জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি। তখনই হোসেন শাহ তখনকার দিনের গৌড়ের সুলতান ছিলেন যার দুইজন রাজকর্মচারীকে সনাতন ও রুপকে তিনি কৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন। এই সনাতন গোস্বামীর পূর্বনাম ছিল অমর ও রুপ গোস্বামীর পূর্ব নাম ছিল সন্তোষ। দীক্ষা গ্রহণের পরে কিন্তু অমরের নাম হয় সনাতন গোস্বামী।
ভারতে বেশি প্রচলিত আছে পিতৃ পিণ্ড দেয়ার কথা। কিন্তু একমাত্র এই রামকেলিতে মেলার প্রথম দিনে বিহার উড়িষ্যা ঝাড়খন্ড থেকে প্রচুর মহিলা ভক্ত আসেন এবং এটাই সম্ভবত একমাত্র ভারতের অন্যতম স্থান যেখানে মাতৃ পিণ্ডদান করা হয়। মহিলারাই পিন্ডদান করে। এই পিন্ডদান কেবল রামকেলি মেলার সময় হয়ে থাকে সকাল ৫টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই পিন্ডদান চলে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আগমন উপলক্ষে প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসের সংক্রান্তিতে রামকেলিতে বিরাট মেলা বসে। ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মেলা চলে আসছে। এই মেলার স্থায়িত্ব সাত দিন। বৈষ্ণব সমাজে রামকেলি মেলা গুপ্ত বৃন্দাবন মেলা নামে পরিচিত।
উপরোক্ত তথ্যে এটা কখনই দাবি করা হচ্ছে না যে এটা পূর্ণত সত্য এবং সঠিক ৷ এই তথ্য ধর্মীয় আস্থা ও লৌকিক মান্যতার উপর আধারিত