বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এই অরন্ধন উৎসব। দুর্গাপূজো আসার আগে এটাই হল বাঙ্গালীদের শেষ উৎসব। বছরে দুবার পালিত হয় এই অরন্ধন উৎসব।
সুকর্মা পুজোর আগের দিন রাতে হয় অরন্ধন উৎসব। এটাই হলো ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া। কারণ ওই দিন হলো ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। আর এই ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতেই মা মনসার পূজো দেওয়া হয়।
আর একবার অরন্ধন উৎসব হয় মাঘ মাসে, সরস্বতী পুজোর পরের দিন। ঐদিন থাকে শীতল ষষ্ঠী। ঐদিন শিলনোড়া পুজো করার দিন।
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজোর দিন যে অরন্ধন উৎসব পালিত হয় তাকে অনেকে বলে উনুন পূজো উৎসব বা গৃহ দেবতার পূজো উৎসব। এই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালাবার নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি আছে অরন্ধন উৎসবে।
এই দিন রান্নাঘরের একাংশ ভালো করে পরিষ্কার করে ফণীমনসার ডাল অথবা শালুক গাছের ডাল দিয়ে মনসার ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং যত্ন সহকারে পুজো করা হয়। এই দিন বিভিন্ন রান্না মাকে ভোগে দেওয়া হয়। যদিও এই রান্না গুলি আগের দিন রাত্রে করা হয়ে থাকে। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন থাকে অমাবস্যার রাত্তির, সেই সময় গৃহস্থের বাড়িতে উনুন জ্বালিয়ে রান্না পুজোর আয়োজন করা হয়।
রান্না পুজোর ভোগ অঞ্চলভেদে বিভিন্ন হয়। অর্থাৎ কোথাও আমিষ ভোগ দেওয়া হয় তো কোথাও নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়।
আমিষ ভোগের ক্ষেত্রে ইলিশ এবং চিংড়ি মাছের রান্নার পদ দেওয়া অন্যতম। নিরামিষ ভোগের ক্ষেত্রে রকমারি ভাজা ছোলা নারকেল দিয়ে কচু শাকসহ একাধিক শাক পান্তা ভাত এবং খেসারির ডাল চালতা এবং গুড় দিয়ে চাটনি, বড়া মালপোয়া ইত্যাদি দেওয়া হয়।
মূলত ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে করা অরন্ধন উৎসব হয় পিতৃপক্ষে। তারপর বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে দেবীপক্ষের জন্য। দেবীপক্ষ এলেই বাঙ্গালীদের উৎসবের ঘনঘটা আবার শুরু হয়। বাঙালি আবার উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। তাই বলা যায় ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে পৃথিবীতে অরন্ধন উৎসব হল দুর্গাপুজোর আগে বাঙালিদের করা শেষ উৎসব।