হিন্দু শাস্ত্র ও প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, গণেশ সমস্ত দুঃখ দূর করেন। হিন্দু ধর্মে প্রধান পাঁচ জন দেবী-দেবতা (সূর্য, বিষ্ণু, শিব, শক্তি, গণপতি)-র মধ্যে গণেশের উপাসনা ভৌতিক, দৈহিক ও আধ্যাত্মিক সিদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করা হয়।
শুধু গণাধ্যক্ষ অথবা মঙ্গলমূর্তি বলেই যে এমনটি, তা কিন্তু নয়। বরং গণেশ পরিবারের গুরুত্বও এ ক্ষেত্রে অপরিসীম। প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অথবা বাড়ির প্রবেশদ্বারের ওপরে মধ্যভাগে স্বস্তিক আঁকা হয় ও স্বস্তিকের ডান ও বাম দিকে শুভ-লাভ লেখা হয়। এর নিদির্ষ্ট একটি কারণ রয়েছে।
শাস্ত্র অনুযায়ী, গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি-সিদ্ধি ও পুত্র শুভ-লাভ। একদিকে গণেশ যেমন বিঘ্নহন্তা, অন্যদিকে ঋদ্ধি-সিদ্ধির আশীর্বাদে ব্যক্তি যশস্বী, বৈভবশালী ও প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার সুখ-সৌভাগ্যের পাশাপাশি শুভ-লাভ ব্যক্তিকে স্থায়ীত্ব ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। শাস্ত্র মতে, সুখ-সৌভাগ্যের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য বুধবার গণেশ পুজোর সময় গজাননের সঙ্গে ঋদ্ধি-সিদ্ধি ও শুভ-লাভের বিশেষ মন্ত্র স্মরণ ও পুজো সুফল দিতে পারে।
হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থ অনুযায়ী গণেশ দেবতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পুজ্য বুদ্ধির দেবতা। বুদ্ধিকে প্রস্তুত করার পবিত্র চিহ্ন হল স্বস্তিক। স্বস্তিকের দুই পৃথক পৃথক রেখা গণপতির স্ত্রী ঋদ্ধি-সিদ্ধির প্রতীক। ঋদ্ধি শব্দের অর্থ বুদ্ধি, যা হিন্দিতে শুভ। ঠিক তেমনই সিদ্ধি শব্দের অর্থ আধ্যাত্মিক শক্তির পূর্ণতা অর্থাৎ লাভ।
বাড়ির প্রবেশদ্বারে স্বস্তিক, শুভ ও লাভ এই শক্তিকেই প্রকাশ করে। এটি এ ভাবেও বোঝা যেতে পারে--
গণেশ (বুদ্ধি)+ ঋদ্ধি (জ্ঞান)= শুভ
গণেশ (বুদ্ধি)+ সিদ্ধি (আধ্যাত্মিক স্বতন্ত্রতা)= লাভ
এ কারণে বাড়ির প্রবেশ দ্বারে শুভ লাভ লেখা উচিত। এর ফলে বাড়িতে শুভ শক্তির সঞ্চার হয় ও অশুভ শক্তি বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ও সন্ধা স্নানের পর ঋদ্ধি-সিদ্ধি-সহ গণেশের মূর্তিকে স্নান করিয়ে তাঁর পাশে শুভ-লাভ স্বরূপের দুটি স্বস্তিক আঁকা উচিত। এর পর গণেশ ও তাঁর পরিবারকে কেসর চন্দন, সিঁদূর, চাল ও দূর্বা অর্পণ করা উচিত।
পুজোর সময় এই মন্ত্র উচ্চারণ করা শুভ-
গণেশ- ওম গং গণপতয়ে নমঃ।
ঋদ্ধি- ওম হেমবর্ণায়ৈ ঋদ্ধয়ে নমঃ।
সিদ্ধি- ওম সর্বজ্ঞানভূষিতায়ৈ নমঃ।
লাভ- ওম সৌভাগ্য প্রদায় ধন-ধান্যযুক্তায়ে লাভায় নমঃ।
শুভ- ওম পূর্ণায় পূর্ণমদায় শুভায় নমঃ।
এই মন্ত্র উচ্চারণের পর গণেশকে মোদকের ভোগ লাগানো উচিত। এর পর ধূপ ও ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করে আশীর্বাদ নিলে সুফল পাওয়া যায়।