পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। একাদশী ব্রত বিষ্ণুকে সমর্পিত। মনে করা হয় এদিন উপবাস রাখলে সমস্ত মনোস্কামনা পূর্ণ হয় এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধির আগমন ঘটে।
পঞ্জিকা মতে, বৃহস্পতিবার, ৩০ তারিখে পৌষ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী পালিত হবে। এই একাদশীকে সফলা একাদশী বলা হয়। এটি বছরের শেষ একাদশী।
সফলা একাদশীর মাহাত্ম্য
শাস্ত্রে এই একাদশী ব্রতর বিশেষ মাহাত্ম্য শিকার করা হয়েছে। এই একাদশী উপবাস রাখলে কাজে সাফল্য লাভ করা যায়। যে জাতকরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ছেন, তাঁরা সফলা একাদশীর উপবাস রাখলে শুভফল পেতে পারেন।
সফলা একাদশীর শুভক্ষণ
একাদশী তিথি শুরু- ২৯ ডিসেম্বর দুপুর ৪টে ১৫ মিনিটে।
একাদশী তিথি সমাপ্ত- ৩০ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে।
একাদশীর পারণ- ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ১৪ মিনিট থেকে ৯টা ১৮ মিনিটের মধ্যে।
এদিন সকাল ১০টা ৩৯ মিনিটে দ্বাদশী তিথি সমাপ্ত হবে।
সফলা একাদশীর ব্রতকথা
পদ্ম পুরাণ অনুযায়ী প্রাচীন কালে মহিষ্মান নামক এক রাজা ছিল। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র লুম্পক নানান পাপ কর্মে লিপ্ত থাকত। তা থেকে ক্ষুব্ধ রাজা লুম্পককে দেশ থেকে বের করে দেন। তার পর জঙ্গলে বসবাস করতে শুরু করে লুম্পক। সেখানে পৌষ কৃষ্ণ দশমীর রাতে ঠান্ডার জন্য ঘুমাতে পারেনি সে।
সকালে ঠান্ডার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে লুম্পক। অর্ধেক দিন কেটে যাওয়ার পর জ্ঞান ফিরলে জঙ্গল থেকে ফল একত্রিত করতে শুরু করে। সন্ধেবেলা নিজের ভাগ্যকে দূষতে দূষতে ঈশ্বরকে স্মরণ করেন সেই রাজপুত্র। আবার নিজের দুঃখের কথা ভাবতে ভাবতে একাদশীর রাতেও ঘুমাতে পারেনি লুম্পক।
এ ভাবে নিজের অজান্তেই সফলা একাদশীর ব্রত পূর্ণ করে লুম্পক। এর পর লুম্পকের চরিত্র সংশোধিত হয়। তখন তাঁর পিতা রাজা মহিষ্মান সমস্ত রাজ্যের দায়িত্বভার লুম্পককে দিয়ে তপস্যার জন্য বেরিয়ে পড়েন তিনি। বহু বছর ন্যায়পরায়ন ভাবে রাজকার্য পালন করার পর লুম্পকও তপস্যায় বেড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর পর বিষ্ণু লোকে তাঁর স্থান হয়।
এই একাদশীর উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে
পদ্ম পুরাণ অনুযায়ী কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে জানান যে সফলা একাদশী ব্রতর দেবতা নারায়ণ। যে ব্যক্তি সফলা একাদশীর দিন উপবাস রেখে বিষ্ণুর পুজো করেন, রাত জেগে ঈশ্বরের ধ্যান ও শ্রীহরির অবতার ও তাঁর লীলা কথার পাঠ করেন তাঁদের ব্রত সফল হয়। সফলা একাদশীর ব্রতর প্রভাবে দেবতা প্রসন্ন হন এবং ব্যক্তির জীবন থেকে সমস্ত দুঃখ কষ্ট দূর করেন।