ঋষি পঞ্চমীর উৎসব অর্থাৎ ভাদ্রপদ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথি এ বছর ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার পালিত হবে। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে যে ব্যক্তি ঋষিদের স্মরণ করে পুজো করেন তিনি সমস্ত প্রকার পাপ থেকে মুক্ত হন। এই দিনটিকে আমাদের পৌরাণিক ঋষি বশিষ্ঠ, কাশ্যপ, বিশ্বামিত্র, অত্রি, জমদগ্নি, গৌতম এবং ভরদ্বাজের পুজোর জন্য বিশেষ বলে মনে করা হয়। ঋষি পঞ্চমীতে মহিলারা গঙ্গা স্নান করলে তার ফল বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্রহ্ম পুরাণ অনুসারে, চার বর্ণের মহিলাদের এই দিনে এই উপবাস পালন করা উচিত। অপবিত্র থাকা অবস্থায় শরীর স্পর্শ করলে কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এই উপবাস পালন করা হয়। নারীরা জ্ঞাতসারে বা অজান্তে ঋতুস্রাবের সময় পুজো, গৃহস্থালির কাজ, স্বামীর স্পর্শ ইত্যাদিতে লিপ্ত হলে এই ব্রত দ্বারা তাদের দোষ নির্মূল হয়।
শাস্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর দশটি অবতারের কথা বলা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম অবতার ছিল মৎস্যের। মৎস্য অবতারের সময় এই পৃথিবীতে বন্যা হয়েছিল। সেই সময় সপ্তর্ষিরা রাজা মনুর সঙ্গে একটি বিশাল নৌকায় চড়েন। সেই সময় বন্যা হলে মৎস্য অবতারে ভগবান বিষ্ণু তাদের সকলের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। সপ্তর্ষিদের সম্বন্ধে পুরাণে অনেক শ্লোক আছে। তার মধ্যে একটি হল
কাস্যপোত্রিভারদ্বাজো বিশ্বামিত্রোৎ গৌতম।
জমদগ্নির্বাসিষ্ঠশ্চ সপ্তাইতে ঋষয়ঃ স্মৃতিঃ।
দহন্তু পাপ সর্ব গৃহান্তবর্দ্ধ্য নমো নমঃ।
এই শ্লোকে ঋষি কাশ্যপ, অত্রি, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, গৌতম, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ প্রমুখের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের নাম জপে সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়।
কাশ্যপ ঋষি-
প্রথম ঋষি কাশ্যপ। ঋষি কাশ্যপের ১৭ জন স্ত্রী ছিল। অদিতি নামক স্ত্রী থেকে সমস্ত দেবতাদের উৎপত্তি এবং দিতি নামক স্ত্রী থেকে অসুরদের উৎপত্তি বলে বিশ্বাস করা হয়। অবশিষ্ট স্ত্রীদের থেকেও বিভিন্ন জীবের উৎপত্তি হয়েছে।
অত্রি ঋষি-
দ্বিতীয় ঋষি অত্রি। ত্রেতাযুগে শ্রীরাম, লক্ষ্মণ ও সীতা বনবাসের সময় ঋষি অত্রির আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন অনসূয়া। ভগবান দত্তাত্রেয় অত্রি ও অনসূয়ার পুত্র।
ঋষি ভরদ্বাজ-
তৃতীয় ঋষি ভরদ্বাজ। তাঁর পুত্র ছিলেন দ্রোণাচার্য। ঋষি ভরদ্বাজ আয়ুর্বেদ সহ অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
ঋষি বিশ্বামিত্র-
চতুর্থ ঋষি হলেন বিশ্বামিত্র। তিনি গায়ত্রী মন্ত্র রচনা করেন। তিনি ভগবান শ্রী রাম ও লক্ষ্মণের গুরু ছিলেন। বিশ্বামিত্রই শ্রীরাম ও লক্ষ্মণকে সীতার স্বয়ম্বরে নিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বামিত্র যখন তপস্যা করছিলেন তখন মানেকা তাঁর তপস্যা ভঙ্গ করেন।
গৌতম ঋষি
পঞ্চম ঋষি হলেন গৌতম। অহিল্যা ছিলেন ঋষি গৌতমের স্ত্রী। গৌতম ঋষিই অহিল্যাকে অভিশাপ দিয়ে তাকে পাথরে পরিণত করেছিলেন। শ্রী রামের কৃপায় অহিল্যা তার রূপ ফিরে পেয়েছিলেন।
ঋষি জমদগ্নি
ষষ্ঠ ঋষি হলেন জমদগ্নি। ভগবান পরশুরাম জমদগ্নি ও রেণুকার পুত্র। বাবার নির্দেশে মা রেণুকার মাথা কেটে ফেলেছিলেন পরশুরাম। এতে জমদগ্নি খুশি হয়ে তাকে বর চাইতে বললেন। তখন পরশুরাম মা রেণুকার জীবন চেয়েছিলেন। জমদগ্নি তার তপস্যার শক্তি দিয়ে রেণুকাকে পুনরুজ্জীবিত করেন।
ঋষি বশিষ্ঠ-
সপ্তম ঋষি বশিষ্ঠ। ত্রেতাযুগে ঋষি বশিষ্ঠ ছিলেন রাজা দশরথের চার পুত্র রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্নের গুরু।