বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই রয়েছে। আগামিকাল বাঙালির নতুন বছরের শুরু। বাংলায় পালিত হবে নববর্ষের উৎসব। সেই সঙ্গে পালিত হবে অশোক ষষ্ঠী। প্রতিবছর অশোক ষষ্ঠী চৈত্র মাসে পড়লেও এ বছর বৈশাখ মাসে প্রথম দিনেই পড়েছে এই অশোক ষষ্ঠী।
কাঁঠালি কলা, অশোক ফুলের বীজ, মাস কলাই এবং দই ইত্যাদি আগামীকালের পুজোয় লাগে। আগামীকাল চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি এই দিনেই পালিত হয় অশোক ষষ্ঠী। যা এবার বৈশাখ মাসে পড়েছে।
অসুখ ষষ্ঠী পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী, প্রাচীনকালে অশোক বনে বাস করত একজন ঋষি মুনি। তিনি একদিন অশোক গাছের তলায় এক শিশু কন্যাকে পুড়িয়ে পেয়েছিলেন। শিশু কন্যাটি গাছের তলায় কাঁদছিল। তিনি তাকে কুটিরে নিয়ে আসেন এবং তার লালন পালনের দায়িত্ব নেন।
সেই শিশু কন্যা টি বড় হতে থাকে ধীরে ধীরে। মুনি তাকে অশোক গাছের নিচে পেয়েছিলেন বলে তার নাম রেখেছিলেন অশোকা। অশোকা যত বড় হতে লাগলো তত দিন দিন অপরূপ সুন্দরী হয়ে উঠতে লাগলো। মুনি এক সময় চিন্তা করে দেখলেন যে ভালো পাত্র দেখে অশোকাকে পাত্রস্থ করে দিতে হবে, কিন্তু তিনি উপযুক্ত পাত্র না পেয়ে খুব রুষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। একদিন তিনি ঠিক করেন আগামী কাল সকালবেলায় দরজা খুলে প্রথম যার মুখ দেখবেন তার সঙ্গেই তিনি তার মেয়ের বিবাহ দেবেন।
পরদিন সকালবেলায় তিনি দরজা খুলে দেখতে পেয়েছিলেন এক সুদর্শন যুবককে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সে এক রাজপুত্র। মুনির তাকে খুব পছন্দ হয় এবং রাজপুত্রও অশোকার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিবাহ করতে রাজি হয়ে যায়।
মনি অশোকাকে তার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় আঁচলে কিছু অশোক ফুল আর অশোক ফুলের বীজ বেঁধে দিয়েছিলেন এবং বলে দেন যে চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন ওই শুকনো অশোক ফুলগুলি, জল দিয়ে খেতে এবং ওইদিন যেন সে অন্ন গ্রহন না করে, সেই আদেশ দেন এবং সেই সঙ্গে এটাও বলে দেন যে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার দুধারে অশোক ফুলের বীজ গুলি যেন সে ছড়িয়ে দিতে দিতে শ্বশুর বাড়ি যায়। পরে যদি সে কখনও কোনও বিপদে পড়ে মুনির কাছে ফিরতে চায়, তাহলে অশোক গাছের সারি বেয়ে সে সহজে কুটিরে ফিরে আসতে পারবে, তার জন্য তিনি এই ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন অশোকাকে।
অশোকা মুনির কুটির থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে অশোক ফুলের বীজগুলি ছড়িয়ে দিতে দিতে যায়। এরপর শ্বশুর বাড়িতে তাকে সবাই বরণ করে ঘরে তোলে। দেখতে দেখতে বহু বছর কেটে যায়। অশোকার সাত পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান হয়। যথা সময়ে তাদের সে বিবাহ দেয়। সময়ের কালে অশোকার শ্বশুর শাশুড়ি একসময় গত হয়।
একবার চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন অশোকা পুত্রবধূদের ডেকে বলে আজ অশোক ষষ্ঠী, আমি অন্ন মুখে দেব না। শাশুড়ির আদেশ মতো বউমারা তার জন্য মুগকলাই রাঁধতে বসে। কিন্তু সেই মুগ কলাইয়ের মধ্যে কোনও ভাবে থেকে যায় একটা ধান। সেই খাবার খেয়ে অশোকার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
তার স্বামী পুত্র এবং পুত্রবধূরা সেইসঙ্গে মেয়ে জামাই সবাই মারা যায়। অশোকা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসে মুনির আশ্রমে। অশোক গাছের সেই সারিগুলো দেখেই সে রাস্তা চিনতে পারে। ততদিনে সেই অশোক গাছগুলি বিশাল বড় বড় হয়ে গেছে। মেয়ের কষ্টের কথা শুনে মুনি ধ্যান যোগে জানতে পারলেন মুগ কলাইয়ের ভিতরে ধান থাকার জন্যই এই বিপত্তি হয়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘটি থেকে মন্ত্রপূত জল দিয়ে দেন অশোকাকে এবং বলেন এই জল ছিটিয়ে দিলে তারা সকলে বেঁচে উঠবে। অশোকা মুনির কথা মতো ফিরে আসে এবং সেই জল ছিটিয়ে দেয় পরিবারের সকলের উপর। সকলে আবার প্রাণ ফিরে পায় ও বেঁচে ওঠে। মুনি অশোকাকে চৈত্র মাসে ষষ্ঠীর দিন মা ষষ্ঠীর পুজো দিয়ে মুগ কলাই এবং দই সহযোগে অশোক ফুল খেতে বলেছিলেন এবং সেই দিন অন্ন না খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন এভাবে পালন করলে অশোক ষষ্ঠী, সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকবে। সেই থেকে শুরু হয় অশোক ষষ্ঠী পালনের রীতি।