সনাতন ধর্মে, ভাদ্রপদ মাসে শ্রী কৃষ্ণ এবং শ্রী গণেশের পুজোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী বহুলা চতুর্থী, বোলচৌথ ও সংকষ্টী চতুর্থী নামে পরিচিত। এই দিনে ভগবান গণেশের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ ও গরুর পুজো করার প্রথা রয়েছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, শ্রী কৃষ্ণ বহুলা নামের একটি গরুকে খুব ভালোবাসতেন। কিংবদন্তী অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছিলেন যে ভাদ্রপদ মাসের এই চতুর্থীতে যে ব্যক্তি গরুর পুজোকরবে সে ধন ও সন্তানের সুখ পাবে। এ বছর বহুলা চতুর্থী পালিত হবে ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার।
বহুলা চতুর্থীর গুরুত্ব
বহুলা চৌথ নিঃসন্তান দম্পতিকে সন্তান প্রদান, সন্তানের কষ্ট দূরীকরণ এবং ধন ও শস্য প্রদানের উপবাস বলে মনে করা হয়। এই উপবাস পালন করলে শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে সকল পার্থিব ও অলৌকিক সুখ লাভ হয়। এই ব্রত পালন করলে শিশু কষ্ট থেকে মুক্তি পায় এবং জীবনের অসুবিধা দূর হয়।
বহুলা চৌথের পুজোপদ্ধতি
বহুলা বা সংকষ্টী চতুর্থীর দিন, সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন, তারপর স্নান করুন এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন। মহিলারা সারাদিন উপোস রাখেন এবং সন্ধ্যায় গরু বাছুরের পুজো করেন। সন্ধ্যার পুজোয়, অনেক ধরণের খাবার তৈরি করা হয় যা ভগবান গণেশ এবং শ্রী কৃষ্ণকে নিবেদন করা হয়। এই নৈবেদ্য পরে গরু ও বাছুরকে খাওয়ানো হয়। পুজোর পর ডান হাতে ধানের শীষ নিয়ে বহুলা চৌথের ব্রত কথা শোনার পর গরু-বাছুরের প্রদক্ষিণ করে সুখ-শান্তি প্রার্থনা করতে হবে। চন্দ্র উদয়ের পর জলে দুধ মিশিয়ে চন্দ্রকে অর্পণ করুন এবং ঘরে সুখ-শান্তি লাভের কামনায় চন্দ্রদেবের কাছে প্রার্থনা করুন।
পৌরাণিক গ্রন্থ অনুসারে, কামধেনু গাভী কৃষ্ণর আমোদ-প্রমোদ দেখার জন্য বহুলা রূপে নন্দের গোয়ালে প্রবেশ করেছিল। কৃষ্ণ এই গরুটিকে খুব পছন্দ করতেন, তিনি সর্বদা এটির সঙ্গে সময় কাটাতেন। বহুলারও একটি বাছুর ছিল, বহুলা চরতে গেলে সে খুব অভাব বোধ করত মায়ের। একবার বহুলা যখন চরতে বনে গিয়েছিল, তখন সে চরতে গিয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল, এবং একটি সিংহের কাছে পৌঁছেছিল। সিংহ তাকে দেখে খুশি হয়ে গেল এবং তাকে তার শিকার বানানোর কথা ভাবতে লাগল। বহুলা ভয় পেয়ে গেল, এবং সে শুধু তার বাছুরের কথাই ভাবছিল। সিংহ তার দিকে এগিয়ে যেতেই বহুলা তাকে বললো সিংহ যেন এখন তাকে না খায়, ঘরে তার বাছুর রয়েছে। সে ক্ষুধার্ত, দুধ খাইয়ে সে ফিরে আসবে, তারপর সিংহ তাকে শিকার বানাতে পারবে।
সিংহ বলল, তোমার এই কথা আমি কীভাবে বিশ্বাস করব? তখন বহুলা তাকে আশ্বস্ত করে এবং শপথ করল যে সে অবশ্যই আসবে।বহুলা বাছুরকে দুধ খাওয়াতে গোয়ালঘরে ফিরে গেলেন এবং আদর করে সেখানে রেখে বনের সিংহের কাছে ফিরে গেলেন। সিংহ তাকে দেখে অবাক হয়। আসলে সিংহ রূপে কৃষ্ণ, যিনি বহুলাকে পরীক্ষা করতে এসছিলেন। এবার কৃষ্ণ তার আসল রূপে আসেন এবং বহুলাকে বলেন যে আমি তোমার প্রতি খুব খুশি, তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থীর দিনে সমগ্র মানবজাতির দ্বারা তোমাকে পুজো করা হবে এবং সমগ্র জাতি তোমাকে মা গাভী বলে সম্বোধন করবে এবং যে এই উপবাস পালন করবে সে সুখ, সমৃদ্ধি, সম্পদ এবং সন্তান লাভ করবে।