সনাতন ধর্মে একাদশীর উপবাস সকল উপবাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়। মাগশীর্ষ মাসটি ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এই মাসে একাদশীর উপবাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এই তিথি ভগবান বিষ্ণুর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। পুরাণ অনুসারে, যিনি মোক্ষদা একাদশীতে উপবাস করে শ্রী হরির পূজা করেন, তিনি সর্বদা ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদ পান। সাধক কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি পায় এবং মৃত্যুর পর সে মোক্ষ লাভ করে।
মাগশীর্ষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী মোক্ষদা একাদশী নামে পরিচিত।চলুন জেনে নেওয়া যাক এ বছরের মোক্ষদা একাদশীর তারিখ, উপবাসের সময় ও গুরুত্ব।
মোক্ষদা একাদশী ২০২২ তারিখ
মোক্ষদা একাদশী ৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার। এদিন গীতা জয়ন্তীও পালিত হবে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, গীতা জয়ন্তীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন এবং তাকে জাগতিক আসক্তি থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, মাগশীর্ষ মাসের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশী তিথি ৩ ডিসেম্বর ২০২২, শনিবার সকাল ০৫.৩৯ টায় শুরু হচ্ছে। একাদশী তিথি পরের দিন অর্থাৎ ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ রবিবার সকাল ০৫.৩৪ টায় শেষ হবে।
একাদশী পূজার সামগ্রী সূচি: শ্রীবিষ্ণুর চিত্র অথবা মূর্তি, ফুল, নারকেল, সুপারি, ফল, লবঙ্গ, ধূপ, দীপ, তুলসী দল, চন্দন, মিষ্টান্ন।
একাদশী পূজা বিধি
একাদশী তিথির হিন্দুধর্মে বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। একাদশী তিথির দিন ভগবান বিষ্ণুর বিধিবিধানের সঙ্গে পুজো করা হয়। মনে করা হয় যে এরকম করলে যেকোন রকম মনস্কামনা পূর্ণ হয়। সকালবেলায় স্নান করে শুদ্ধ বসনে দীপ জ্বালিয়ে ভগবান বিষ্ণুর গঙ্গা জল দিয়ে অভিষেক করতে হবে। ভগবান বিষ্ণুকে ফুল এবং তুলসী দল অর্পণ করতে হবে। সম্ভব হলে এই দিন ব্রত রাখা উচিত। পূজা শেষে ভগবানের আরতি করতে হবে।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, ভগবানকে শুধু সাত্বিক জিনিসের ভোগ দেওয়া উচিত। ভগবান বিষ্ণুর ভোগে অবশ্যই তুলসী পাতা দিতে হবে। মনে করা হয় যে বিনা তুলসিতে ভগবান বিষ্ণু কোনদিনই ভোগ গ্রহণ করেন না। এইদিন ভগবান বিষ্ণুর সাথে মা লক্ষ্মীরও পুজো অবশ্যই করা উচিত এবং এই দিন যত বেশি সম্ভব ভগবানের ধ্যান করা উচিত। এই উপবাসে বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়, এর পাশাপাশি রাত জেগে ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ করা উচিত।মোক্ষদা একাদশীর উপবাস পালন করলে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়াও, এই দিনে দান করলে বহুগুণ পুণ্য হয়।
মোক্ষদা একাদশীর তাৎপর্য
মোক্ষদা একাদশী মানে আসক্তি বিনাশকারী। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, মোক্ষদা একাদশীর উপবাস করলে ব্যক্তির লোভ, আসক্তি, হিংসা ও সমস্ত পাপ দূর হয়। এই উপবাস এর প্রভাবে পরিস্থিতি সাধকের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠে। এই দিনে যারা লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা করেন তাদের ধন ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায়।
মোক্ষদা একাদশীতে সকালে স্নান করে শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে গীতা পাঠ করলে ভক্ত সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পায়।
এই দিনে ভগবান বিষ্ণুকে পাঁচটি গুঞ্জাফল অর্পণ করুন। পূজার পর সেগুলো আপনার সম্পদের স্থানে রাখুন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এটি উন্নতির পথ খুলে দেয় এবং ঘরে সম্পদের দেবী লক্ষ্মী অধিষ্ঠান করেন।