চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো বিশ্ব বিখ্যাত এটা সর্বজনবিদিত ৷ চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোর সাজ প্রতিবছরই নজর কাড়ে। চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্যে বেশি বিখ্যাত৷ এই সময় সারা শহর জুড়ে পুজোর আমেজ, আলোর রোশনাই পুরো শহরটাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তোলে।
শীতের আমেজ সবে পড়তে শুরু করেছে। এই সময় দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা এক অন্য রূপ নেয় ৷ চন্দননগর মূলত ফরাসি শহর নামেই পরিচিত ৷ ফরাসিরা বাণিজ্য করতে প্রথম এখানে আসে ৷ সেই সময় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে কিন্তু কলকাতা নয় চন্দননগরকেই ধরা হতো। হুগলি নদীকে কেন্দ্র করে এখানে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ৷চাউল পট্টির যে পুজোটা হয় সেটা বাণিজ্যের দিক থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল আগে ৷
প্রসঙ্গত বলা দরকার চাউল পট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো কিন্তু ৩০০ বছরের বেশি পুরনো ৷ এখানে প্রথম পুজো শুরু করেছিল ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরী ৷ এখানে মাকে আদি মা বলে ডাকা হয় ৷ ইন্দ্র নারায়ন চৌধুরী প্রথম এখানে নিজের ব্যবসা শুরু করেছিল ৷ সেই সময় এই অঞ্চল ছিল বাংলার অন্যতম শস্য ভান্ডার ৷ তিনি ফরাসি দের সাথে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ৷ ব্যবসা ছাড়া তিনি আরও অন্যান্য কাজে যুক্ত থাকতেন ৷
মূলত কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুকরণে তিনি এমন পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন ৷ চন্দননগরে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর বন্ধু ছিলেন ৷ ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী একজন সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে ফরাসি কোম্পানির দেওয়ান হয়ে ওঠেন ৷পরে তিনি মুশিদাবাদের নবাব দরবারে হিসাব রক্ষকের কাজেও যুক্ত হয়েছিলেন ৷ এই চাউল পট্টি থেকেই মূলত তার উত্থান ৷ ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরী তার নিজের বাড়িতে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন ৷এটাই বর্তমানে এখনকার চাউল পট্টির পুজো ৷
নাম শুনেই বোঝা যায় এখানে বাজারের চালের ব্যবসায়ীরা পূজোর পুরো দায়িত্ব সামলান | এই পুজোতে আড়ম্বরের থেকে বেশি সাবেকিয়ানা কে গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷ এখনো এই পুজো ব্যবসায়ীরা তাদের প্রাচীনতম পূজা হিসাবে পালন করে ৷ অনেকের মতে এই পুজো ৩০০ বছরের পুরনো ।
এখানের মা জগদ্ধাত্রী আদি মা রুপে পরিচিত। খুবই জাগ্রত মনে করা হয় এখানে দেবীকে ৷ এখানে ভক্তরা মানত করে সোনা রুপা বেনারসি শাড়ি সেই সব দিয়ে মাকে সাজানো হয়। ষষ্ঠী থেকে নবমী ধুমধাম করে মায়ের পুজো হয়। সপ্তমীর দিন সাতটি থালায় মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার এখানে সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেক দিনই বলি দেওয়া হয় ৷ কখনো ছাগ বলি কখনো আখ বলি কখনো কুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি এখনও এখানে আছে ৷এখানে অষ্টমীর দিনকে মাকে ১০৮ খানা রক্ত পদ্ম নিবেদন করা হয়।
মা জগদ্ধাত্রী চতুর্ভুজা চার হাতে তার শঙ্খ চক্র ধনু বান রয়েছে তিনি করিন্দ্রা অসুরকে বধ করেছিলেন ৷ চাউল পট্টির এই পুজোতে আধুনিকতার থেকে বেশি প্রাচীন রীতিনীতি ও সাবেকিয়ানাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷ তাইতো আজ ও এখানে বলি দেওয়ার রীতি চলে আসছে ৷