বারোয়ারি দুর্গাপুজো— এই শব্দযুগলের সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, ‘বারোয়ারি’ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে। শুধু তাই নয়, এই বারোয়ারি পুজো যে দুর্গাপুজো দিয়ে নয়, জগদ্ধাত্রী পুজো দিয়েই শুরু হয়েছিল, সেটিও হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এর ইতিহাসটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। জগদ্ধাত্রীর পুজোর সময়ে সেই ইতিহাস ফিরে দেখা যাক।
বহু যুগ আগে, দুর্গাপুজো ছিল একেবারেই বনেদি বাড়ির পুজো। সেই সময়ে বারোয়ারি পুজো বলে কিছু ছিল না। বিত্তবানদের বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত। তা মূলত শহর এলাকায়। তখন গুপ্তিপাড়ায় জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত জাঁকজমক করে। ইতিহাস বলছে, সেই সময়ে নাকি একবার গুপ্তিপাড়ার জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো দেখতে গিয়েছিলেন স্থানীর গরিব বাসিন্দারা। তাঁদের তখন বাধা দেওয়া হয়। তাঁদের পুজোবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অপমানিত গ্রামবাসীরা ঠিক করেন, তাঁরা আর কখও জমিদার বাড়িতে পুজো দেখতে যাবেন না। বরং নিজেরাই দুর্গাপুজো করবেন।
কিন্তু তত দিনে দুর্গাপুজো করার সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তার প্রস্তুতির জন্যও সময় লাগবে। ফলে দুর্গাপুজো আ করা হয় না। ঠিক সেই সময়ে গ্রামের ১২ জন তরুণ এগিয়ে আসেন। তাঁরা অর্থসাহায্য করে পুজোর ব্যবস্থা করেন। দুর্গাপুজোর সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে সব কিছু সামলে উঠতে কিছু দিন সময় লাগে। তার পরেই এই পুজো হয়। এবং সেটিও হয় ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর পুজোর সব আচার মেনেই। সেই পুজোকেই তখন থেকে জগদ্ধাত্রী পুজোর নাম দেওয়া হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই পুজোর কথা সেই সময়ের বহু খবরের কাগজেই প্রকাশিত হয়েছিল। হুগলির গেজেট, বেঙ্গল গেজেট-সহ দেশের নামজাদা সংবাদমাধ্যমে নথিবদ্ধ হয় এই ঘটনা। প্রায় ২৭০ বছর আগের এই পুজোর পিছনে ১২ জন তরুণ বা বন্ধুর ভূমিকা ছিল বলে এটিকে ‘বারো ইয়ারি’ পুজো বলে অভিহিত করা হয়। পরে তা আস্তে আস্তে ‘বরোয়ারি’ শব্দে পরিণত হয়।
এইভাবেই আস্তে আস্তে বারোয়ারি পুজোর সূচনা বলে মনে করেন অনেকে। আজকের যা বারোয়ারি দুর্গাপুজো, সেটিও সেদিনের বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর হাত ধরেই এসেছিল বলে মনে করা হয়।