এখন জগদ্ধাত্রী পুজো বলতে সারা পৃথিবীর মানুষ চন্দননগরের পুজোই বোঝেন। কিন্তু এই পুজোর সূচনাটা চন্দননগরে মোটেই হয়নি। হয়েছিল অন্য এক শহরে। এবং একটি গাছতলায়। তেমনই বলছে ইতিহাস। যা শুনলে যে কেউ চমৎকৃত হতে পারেন।
কোথায় শুরু হয়েছিল এই পুজো? ইতিহাস বলছেন শান্তিপুরে। লোককথা বলছে, শান্তিপুরের চন্দ্রচূড় তর্কমুনির কামরাঙা গাছতলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে প্রথম দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়। তবে এটি নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। যেমন অনেকে বলেন। ১৭৬২ সালে নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। তবে সেটি নাকি ছিল শুধুমাত্র ঘটপুজো। প্রতিমা ছিল না সেখানে। আর সেই কারণেই উঠে আসে শান্তিপুরের নাম।
স্থানীয় ইতিহাস বলছে, শান্তিপুরের হরিপুর নিবাসী তন্ত্রসাধক চন্দ্রচূড়ের সাধনায় পাওয়া যায় দেবী জগদ্ধাত্রীর বর্ণনা। রাজা গিরিশচন্দ্র রায় যখন ১৮০২ সালে নদিয়ার রাজত্ব করছেন, শান্তিপুরের হরিপুরে তখন ১০৮ ঘর ব্রাহ্মণের বাস।
তাঁদের মধ্যে থেকে চন্দ্রচূড়কে রাজা নিজেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজসভায় থাকার জন্য। সেই সময়ে ঊষাকালে প্রথম বার জগদ্ধাত্রীর মূর্তি গড়ে পঞ্চমূণ্ডির আসনে কামরাঙা গাছের নীচে পুজো করা হয়েছিল দেবীকে। কথিত আছে, তার পর থেকেই কৃষ্ণনগর, চন্দননগর এলাকায় জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু হয়।
নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আমলে নবাব আলিবর্দি খাঁ, তাঁর কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন দূর্গাপুজোর আগে। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে বন্দি করা হয় মুর্শিদাবাদে।
বিসর্জনের বাদ্যির মাঝে কৃষ্ণচন্দ্র ফিরছিলেন কৃষ্ণনগরে। তখন বিষাদ ঘিরে ধরে তাঁকে। দূর্গাপুজোয় যে তাঁর থাকা হয়নি! শোনা যায়, সেই রাতেই কৃষ্ণচন্দ্র দেবী জগদ্ধাত্রীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান, তাঁর পুজো করার জন্য।
এই সময়ে শান্তিপুরের ভাগীরথী নদীর উপর দিয়ে ফিরছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। সন্ধ্যা নেমে আসায় হরিপুর ব্রহ্মশাসনে রাতে থেকে যান তিনি। স্বপ্নাদেশ মেনে সেখানেই চন্দ্রচূড় তর্কাচূড়মণির পঞ্চমুণ্ডির আসনে পুজো করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র।
তা থেকেই ধীরে ধীরে বাংলার বুকে শুরু হয় দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। এরপরে কৃষ্ণচন্দ্রের পুজোর অনুপ্রেরণায় ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন ফরাসডাঙা বা এখনকার চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।