বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে। বাংলার লৌকিক দেবদেবীর মধ্যে অন্যতম হলেন মা ষষ্ঠী। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী তার কৃপায় সন্তান আসে বন্ধার কোলে। তার নির্দিষ্ট কোনও মূর্তি দেখা যায় না। তবে তিনি বাংলার ঘরে ঘরে সমাদরের সাথে পুজিতা হন। তার পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে গেল জামাই আদরের পরম্পরা। সেখান থেকে শুরু হলো জামাই ষষ্ঠী। সারা বছর অনেক ষষ্ঠী তিথি পালিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্গা ষষ্ঠী এবং অরণ্য ষষ্ঠী বা জামাই ষষ্ঠী।
জৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি কে বেছে নেওয়া হলো জামাই আপ্যায়নের জন্য। মধ্যযুগ হল মঙ্গলকাব্যের রচনাকাল। মনে করা হয় সেই সময় থেকেই বাংলায় এই রীতির প্রচলন হয়েছে। মেয়ের জীবন যাতে শশুর বাড়িতে ভালোভাবে কাটে সেখান থেকে এই জামাই বরণের আচার শুরু হয়। এছাড়া শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে যাতে জামাইয়ের সম্পর্ক মজবুত হয়, সেরকম বিশ্বাস রয়েছে এই লৌকিকতার পিছনে।
মা ষষ্ঠীর সাথে জামাইয়ের কী সম্পর্ক এ নিয়ে শাস্ত্র কী বলছে যে দেখে নেওয়া যাক। ভারতবর্ষ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় সংস্কার ছিল কন্যার যতদিন না পুত্র সন্তান না হয় ততদিন কন্যার পিতা বা মাতা কন্যা গৃহে পদার্পণ করবেন না। সেই সময় বাল্যবিবাহ চালু ছিল। সেই সময় সমস্যা দেখা দেয় অল্প বয়সে কন্যার সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার বেশি ছিল। ফলে কন্যার পিতা-মাতাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হতো কন্যার বাড়ি যাওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখ দর্শন কীভাবে ঘটবে তাই জৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হয়েছিল জামাইষষ্ঠী হিসাবে। যেখানে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা হবে, কন্যার মুখদর্শন ও করা হবে আবার সেই সঙ্গে প্রার্থনাও করা হবে মাষষ্ঠীর কাছে যাতে কন্যা শীঘ্র পুত্র মুখ দর্শন করতে পারে। বর্তমানে যদিও এই সংস্কার পরিবর্তিত হয়েছে। কন্যার পিতা মাতা বা যিনি কন্যা সম্প্রদান করেছেন তিনি এক বছর কন্যার বাড়ি যাবেন না বা গেলেও কন্যার বাড়ির অন্ন গ্রহণ করবেন না। আধুনিক শহরের জীবনে অবশ্য এই সংস্কার গুরুত্ব পায় না। তবে এখনো বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় জামাইষষ্ঠী।