বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবে বছরের নবম মাস পৌষ। পৌষ মাসকে অনেক এ কিন্তু সৌভাগ্য মাসও বলে থাকেন । এই মাসে অনেকে করে থাকেন পৌষ লক্ষীর পুজো। মা পৌষলক্ষ্মী সম্পদ প্রদায়িনী।
অনেক জায়গায় মা ধান লক্ষী নামে পূজিতা হন। কারণ ধান অর্থাত্ খাদ্য শস্যই হল প্রকৃত সম্পদ তাই তিনি ধান লক্ষ্মী নামে পূজিতা হন।
লক্ষ্মী হলেন নারায়ণের স্ত্রী নারায়ণী। তিনি হলেন শ্রী ও সমৃদ্ধির প্রতীক। বাংলার প্রতিটা গৃহস্থের ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে তিনি হন পূজিতা। সারা বছরই হয় দেবী লক্ষ্মীর উপাসনা। শারদ পূর্ণিমায় তিনি কোজাগরী নামে পূজিতা আবার দীপান্বিতা অমাবস্যার দিনও হয় তার বিশেষ পূজা। তেমনই পৌষ, চৈত্র বা ভাদ্রেও হয় দেবী লক্ষ্মীর বিশেষ পুজা। তবে অঞ্চল ভেদে এক এক জায়গায় এক এক নামে হয় এই লক্ষ্মী পূজা।
আশ্বিন-কার্তিকে কোজাগরী ও দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজার পরই বিশেষ করে কৃষি-নির্ভর পল্লিবাংলার ঘরে হয় পৌষ লক্ষীর আরাধনা। পৌষলক্ষ্মীর এই পুজা হয় সরায় আঁকা পটে যাকে এখানে বলা হয় লক্ষ্মী-সরা। নতুন ফসলের অন্ন দিয়ে ভোগ দিয়ে বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গেই পূজা হয় দেবী পৌষ লক্ষীর।
সাধারণত লক্ষ্মীপুজার মতনই পৌষলক্ষ্মীর পুজারও মূল আয়ােজন করেন ঘরের মহিলা সদস্যরা। পুজার জন্য কোথাও কোথাও ডাকা হয় পুরােহিতকে, কখনও বা ব বাড়ির মহিলা সদস্যরাই করেন পূজা। আগে বাড়ির উঠোন ধোয়া হত গোবরজলে। ধানের মড়াইতে দেওয়া হতো শ্রী-চিহ্ন। সব জায়গায় দেওয়া হতো আলপনা । গরুর ঘরও পরিষ্কার করা হতো। অনেক বাড়িতে চাষের জিনিস এর ও পুজো দেওয়া হয় এইদিন।
পূজায় দেওয়া হয় নানা মরশুমি ফল। মা লক্ষ্মীকে দেওয়া হয় নতুন চালের পিঠে পায়েস ও অন্নভোগ। এই দিন বিশেষ করে সমস্ত গ্রামবাংলার মানুষ মেতে ওঠেন আনন্দে।
লক্ষ্মী পূজার অন্যতম অঙ্গ হল পাঁচালি পাঠ। বাড়ির মহিলা সদস্যরাই পাঠ করেন পাঁচালি। পৌষ-লক্ষ্মীর ব্রতকথাটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। সৎ ও সুন্দরের নীতিতে অবিচলিত থেকে, ভক্তি ও বিশ্বাসে অচল থেকে মা লক্ষীর পূজা করলে কীভাবে তার আশীর্বাদ পাওয়া যাবে সেই কথাই তুলে ধরেছে এই ব্রতকথা।