Amiya Kumar Bagchi: তখন সবেমাত্র কলেজের ফার্স্ট ইয়ার। বিধাননগর কলেজের অর্থনীতির বিভাগের তৎকালীন হেড অব ডিপার্টমেন্ট এআরসি স্যর (অমিত রায়চৌধুরী) প্রায়শই বলতেন, রেজাল্টের নিরিখে আমাদের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্ট প্রেসিডেন্সিকে বেশ কয়েকবার হারিয়ে দিয়েছে। আমাদের ব্য়াচের তখনও একটা পরীক্ষাও হয়নি। তবুও একটা অকারণ গর্বের বশে ‘এই করতে হবে, ওই করতে হবে’র বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল। আসলে কম বয়সের উচ্ছ্বাসটিই ছিল আসল। যার একটা ফল হিসেবে জন্ম নিল ডিপার্টমেন্টেের ম্যাগাজিন প্রকাশের সিদ্ধান্ত। স্য়র-ম্যাডামরা সায় দিলেন। বিভাগীয় একটি ম্যাগাজিন বরাবরই কৌলিন্যের প্রকাশ।
বড়জোর পাঁচ মিনিটের আলাপ
কিন্তু বিশেষ লেখা না থাকলে কেমন যেন লাগে। কে লিখবে স্পেশাল আর্টিকল। তরুণ তুর্কীদের খোঁজ শুরু হতেই চোখ পড়ল কলেজের অদূরে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে। অর্থনীতির বেশ কয়েকজন নামকরা অধ্যাপকদের ঠিকানা তখন আইডিএসকে (ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতা)। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান তথা অধিকর্তা স্বয়ং অমিয়কুমার বাগচী। ফলে সুযোগ যখন এসেছে, হাতছাড়া করার কোনও অর্থ হয় না — এই ভেবেই দুই বন্ধু মিলে দিনক্ষণ দেখে চলে গিয়েছিলাম তাঁর কাছে। তাঁকে সবসময় পাওয়া মুশকিল। আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট শেষমেশ পাওয়া গিয়েছিল। বড়জোর পাঁচ মিনিটের আলাপ। কিন্তু সেটুকু সময়েই তাঁর কথাবার্তা মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো।
আরও পড়ুন - পেটের ব্যথায় ঘুরছিল মাথাও! বৃদ্ধের টেস্ট করাতেই চক্ষু চড়কগাছ ডাক্তারদের
আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো
বয়সের নিরিখে তখন আমরা তাঁর বয়সের তিনভাগের একভাগও নই। কিন্তু কথাই শুরু করলেন ‘আপনি’ দিয়ে। আজকাল অহরহ ‘তুমি-তুই’-এর অস্বাভাবিক ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার মাঝে তাঁর ‘আপনি’ বলা মুগ্ধ করেছিল। বিনীত স্বরে দুজনেই বলি, তুমি বললে ভালো লাগবে। আমরা অনেক ছোট। তিনি বলেন, ছোট তো কী, প্রত্যেকেই সম্মাননীয় (অনেকেই বলবেন, তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক ভাবধারায় বিশ্বাস করতেন বলেই ‘আপনি’ বলেন)। কিন্তু এসবের পরেও তাঁর আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
আরও পড়ুন - ভারতে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে? বড় আপডেট দিল সমীক্ষা
লেখার অনুরোধে বিনীত উত্তর
দেখার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলেও লেখার অনুরোধ অবশ্য রাখতে পারবেন না জানান। কাজের চাপে নতুন লেখা লিখে ওঠা মুশকিল হবে জানান। তবে আশাহত করতে চাননি। তাঁর একটি পুরনো ইংরেজি লেখা তিনি দিতে চান। অন্য জায়গায় প্রকাশিত। লেখাটি খুঁজে রাখবেন বলেন। আমাদের পরে আরেকবার ফোন করে আসতেও বলেন। কিন্তু সেই যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। কারণ তারপরেই ম্যাগাজিনের পরিকল্পনা বাতিল করে দেওয়া হয়। সে কথা জানানোর মতো সাহস সঞ্চয় করে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বেপাত্তাই হয়ে যেতে হল শেষমেশ।
অপ্রত্যাশিত অসম্মান আজকাল ঘন ঘন পাওয়া যায়। তাই অপ্রত্যাশিত সম্মানের মূল্য যেমন বেশি, তেমনই মনে থাকে অনেকদিন। সেই সূত্রেই হয়তো থেকে যাবেন অমিয়বাবু। মার্কসীয় অর্থনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা অমিয়কুমার বাগচী।