সদ্যই শেষ হয়েছে এবারের লোকসভা নির্বাচন। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রকাশিত হবে এবারের নির্বাচনের ফলাফল। তার আগেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন এক ভোটকর্মী অনুপমা দাস।
আরও পড়ুন: 'বিয়ের খবর ঢাকতে আমায় আর ছেলেকে ব্যবহার করল', ফের রাজের উপর মেজাজ হারালেন পরীমনি? কেন
এদিন অনুপমা দাস তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোট করাতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বলাই বাহুল্য সেই অভিজ্ঞতা সুখকর তো নয়ই, উল্টে ভয়াবহ! পোস্ট দেখেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গোটা ঘটনা তিনি হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে তুলে ধরেন।
এদিন অনুপমা জানান, 'বিকেল ৫টা নাগাদ সেদিন আমরা বুথে পৌঁছাই। জলকলের মহাদেবনগর আরপি স্কুলে আমাদের বুথ পড়েছিল। গিয়ে দেখি বাড়িটা রীতিমত পরিত্যক্ত। সেখানকার স্থানীয়রাও জানিয়ে দেন মহামারীর পর এখানে ক্লাস হয় না। ভিতরে ঢুকে দেখি বাথরুমের মধ্যে জঙ্গল। কারেন্ট নেই। জলের পাম্প আছে, চলছে কিন্তু জল উঠছে না। যে দুটো কল আছে তাতেও জল নেই। স্কুলবাড়িতে একটিই মস্ত হলঘর ছিল যা মাঝে বস্তা জুড়ে জুড়ে ত্রিপলের মতো করে ঘরটাকে ভাগ করে বুথ ১ আর বুথ ২ করা হয়েছে।' এতটুকুই পড়েই অবাক হচ্ছেন? তাহলে বলব, এখনও অবাক হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। তিনি এরপর যা যা জানিয়েছেন সেগুলো শিউরে ওঠার জন্য, গণতন্ত্রের এই উৎসবের ভয়ঙ্কর দিক তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।
অনুপমা এরপর জানান, 'আমাদের বুথ ১ ছিল। বুথ ২ নোংরা আবর্জনায় ভর্তি ছিল। অনেকটা স্টোর রুম মতো। তাতে জল পড়ে পড়ে পুকুর হয়ে গিয়েছে। গোড়ালি ডুবে যাচ্ছে। এই অবস্থা হওয়ায় বলে কয়ে বুথ ২ লাইব্রেরি মতো যে ঘর ছিল সেখানে শিফট করানো হয়। আমরা যেদিন গেছি তার আগেরদিন ক্যামেরা লাগিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তখনও এক পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, যে সেলফ হেল্প গ্রুপের মহিলাটির আমাদের জন্য এসে রান্না করার কথা ছিল তিনি প্রথমে ফোন না ধরলেও পরে বিকেলে এসে জানান তাঁর আত্মীয় মারা গেছেন, তিনি রাঁধতে পারবেন না। এমনকি জলের ব্যবস্থাও করে দিতে চাননি। আমরা যে দুদিন ছিলাম নিজেরা জল কিনে খেয়েছি এবং অন্যান্য কাজ করেছি। ভাগ্য ভালো যে কাছেই আমার এক বন্ধুর বাড়ি সেখানে গিয়েছি ফ্রেশ হতে। বুথের দায়িত্বে থাকা অটোচালক একজনকে ধরে এনে কারেন্টের ব্যবস্থা করবে। তবুও বারান্দায় আলো ছিল না, বাথরুমে আলো ছিল না। জওয়ান দাদারা তখন বুদ্ধি দেন, বুথের আলো বাথরুমে লাগিয়ে দেবেন বলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।'
অভিযোগ জানিয়েছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই অনুপমার কথায় উঠে এল ক্ষোভের বন্যা। তিনি স্পষ্টই জানালেন, 'সেক্টর অফিসারের মুখ পর্যন্ত দেখিনি। উনি একবারের জন্যও আসেননি। কোনও দায়িত্ব পালন করেননি। আমরা নিজেদের দায়িত্ব ইভিএম ফেরত দিতে গিয়েছি। আমাদের রিলিজ লেটার পর্যন্ত উনি দেননি। একবারও ফোন করে জিজ্ঞেস করেননি যে আমরা বাড়ি ফিরেছি কিনা। উপরন্তু এই সমস্যার কথা ডিএম অফিসে জানালে ইলেকশন সেলে অভিযোগ জানাতে বলে। তাঁরা আবার বলেন সেক্টর অফিসারকে জানাতে। কিন্তু তাঁকে বলা তিনি সাফ সাফ বিডিওকে জানানোর কথা বলেন। নিজে কোনও দায়িত্বই পালন করেননি।' ভোটের জন্য যে দুদিন তাঁরা ওই স্কুলে ছিলেন সেই দুদিন তাঁদের যে দুর্বিষহ ভাবে কেটেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন: 'ও করলে লীলা আর আমাদের বেলায়...' বিকিনি পরে ছবি দিতেই পলি-ময়ূরীর রোষের মুখে নুসরত!
ভাবছেন কতজন মহিলা ছিলেন সেই দুই বুথের দায়িত্বে? ৫ জন। অথচ তাও এই অব্যবস্থা। ট্রেনিংয়ের সময় বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোনও সুব্যবস্থা রাখা হয়নি।