'এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়।' দুর্যোগ কবলিত এলাকায় বিজেপি নেতাদের উপর হামলার পরেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে ‘একতা বার্তা’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাকৃতিক রোষানলে লণ্ডভণ্ড গোটা উত্তরবঙ্গ৷ সোমবার উত্তরবঙ্গের সেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে আক্রান্ত হন মালদহ উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার পরই উত্তরবঙ্গে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি শান্তি ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত উত্তরবঙ্গ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে সকলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'এই দুর্যোগে বহু মানুষ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁদের কষ্ট আমরা গভীরভাবে অনুভব করছি। তবুও, এই কঠিন সময়েও আমাদের মনে রাখতে হবে , একতা ও ধৈর্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার কাছে অনুরোধ, সাহস হারাবেন না, সংযম ও সতর্কতা বজায় রাখুন। সরকার ও প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে মানুষের পাশে আছে, এবং আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব।' এই পরিস্থিতিতে সকলকে শান্ত থাকতে এবং গুজবে কান না-দেওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, 'দয়া করে শান্ত থাকুন, গুজবে কান দেবেন না, এবং চারপাশের মানুষকে সহযোগিতা করুন। এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয় , আমরা একে অপরের পাশে থেকে, একসঙ্গে এই সংকটের মোকাবিলা করব।' মুখ্যমন্ত্রী কোন ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’র কথা বলতে চেয়েছেন, তা তাঁর পোস্টে স্পষ্ট করেননি। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সংযম ও শান্তির বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এদিন হাসিমারা বায়ুসেনা ছাউনি থেকে সড়কপথে নাগরাকাটার বন্যাকবলিত এলাকায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নাগরাকাটার কালিখোলা সেতুতে এসে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন, পুলিশ সুপার উমেশ খাণ্ডবাহালে, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন-সহ আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিরা। জেলার জনপ্রতিনিধি-সহ আধিকারিকদের বন্যা কবলিত এলাকার মানুষদের জন্য কাজ করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। কালিখোলা সেতুর মেরামত কীভাবে হচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখেন তিনি। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। যারা কাজ করছেন তাদের লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার নির্দেশ দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের।
ঘটনার সূত্রপাত
সোমবার সকালে নাগরাকাটার দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগ, জলপাইগুড়ির বামনডাঙায় ঢোকার আগে আক্রমণের মুখে পড়েন দু’জনে। লাঠি, জুতো নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হন কয়েকশো মানুষ। নদী থেকে পাথর তুলে তাঁদের গাড়ি লক্ষ করে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। তাতেই মাথা ফেটে যায় খগেনের। গলগল করে রক্ত ঝরতে থাকে। ধাক্কা দেওয়া হয় শঙ্করকেও। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনে।