ইলিশ মাছের দাম সারা বছর বাঙালির নাগালের বাইরে থাকলেও আজও বর্ষাকাল আসতে না আসতেই বাঙালির মন চায় জলের রূপলী শস্যের দিকে। ইলিশ সাধারণত নোনা জলের মাছ, বর্ষার সময়ে সমুদ্র থেকে বড় নদী কিংবা মোহনায় ডিম পাড়তে আসে ঝাঁকে ঝাকে। আর এই প্রাকৃতিক নিয়মকে কাজে লাগিয়ে ঐতিহাসিকভাবে ইলিশ মাছ ধরা হয়ে এসেছে গঙ্গা-পদ্মার মত নদীগুলিতে। কৃত্রিমভাবে ইলিশ মাছ চাষ করা এক সময় কার্যত ধারণার বাইরে ছিল মানুষের। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছেন দফায় দফায়। অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখল তারা। হ্যাঁ, এবার পুকুরেই চাষ করা যাবে ইলিশ মাছ।
গত বুধবার ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এবার থেকে পুকুরেও চাষ করা যাবে ইলিশ মাছ। ইলিশের ওজন হবে ৭০০ গ্রামের কাছাকাছি আর, পুকুরে কৃত্রিমভাবে চাষ করার ফলে দামও থাকবে নাগালের মধ্যে। এমনটাই মনে করছেন আধিকারিক ও বিজ্ঞানীরা। ইলিশ মাছ পাওয়া যায় মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নদীগুলিতেই। বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা, ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ইলিশ মাছ তৈরির সমীকরণ বের করতে পারল। এবার এই মাছের অ্যাকোয়াকালচার শুরু করা হবে। আর এই প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলকে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য রহড়া ফ্রেশওয়াটার জোন, কাকদ্বীপের ব্যাকওয়াটার জোন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের ইন্টারমিডিয়েট জোনকে ব্যবহার করা হবে। ইলিশ মাছের খাদ্য হিসাবে জু প্লাংটন ব্যবহার করবেন বিজ্ঞানীরা, এমনটাই জানা যাচ্ছে সূত্র মারফত। ফলে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশের জন্য আর বর্ষাকালের অপেক্ষা করতে হবে না, যে কোনও ঋতুতে পুকুর থেকেই পাওয়া যাবে ইলিশ মাছ।