রাজ্যজুড়ে দ্রোহের আবহে বাঙালি মননে নিজেদের ঘাঁটি পোক্ত করতে চাইছে বাংলার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে একের পর এক বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলি রাজ্য সরকারের অনুদান ফেরাচ্ছে। সূত্রের খবর, এই বিষয়টিকে 'কাজে লাগিয়েই' সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলির কাছাকাছি আসার পরিকল্পনা করেছে গেরুয়া শিবির।
কেমন সেই পরিকল্পনা?
বিজেপির অন্দরের খবর, কোন কোন দুর্গাপুজো কমিটি ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে, সেই হিসাব রাখা হচ্ছে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মত, আগামী দিনে আরও একাধিক পুজো কমিটি এই পথে হাঁটবে। কারা সেই সিদ্ধান্ত নেবে বা নিতে চলেছে, সেদিকেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের পরিকল্পনা হল, সরকারি অনুদান ফেরানোয় যে পুজো কমিটিগুলি আর্থিক সমস্য়ায় পড়বে, প্রাথমিকভাবে তাদের আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হবে। যদি তারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তাহলে তো 'অতি উত্তম'। আর তা না হলে 'নৈতিকভাবে' এই পুজো কমিটিগুলির পাশে থাকা হবে।
বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, দুর্গাপুজো শুধুই বাঙালির মহোৎসব নয়, দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগ। যার সঙ্গে কোনও আপস বাঙালি বরদাস্ত করে না। এমনকী, সেই কারণেই এবারের পুজোয় রাজ্য সরকারি অনুদান ফিরিয়ে অভিনব কায়দায় আরজি কাণ্ডের প্রতিবাদ করছেন বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।
দলীয় সূত্রের দাবি, এই আবেগেরই সহমর্মী হতে চাইছে বিজেপি। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই কলকাতা তথা বাংলায় দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাঙালি মননে স্থান পাকা করার চেষ্টা করেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু তাদের সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। তার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন -
প্রথমত, অনেকের মতেই, বাঙালির দুর্গাপুজো যত না ধর্মাচারণ, তার থেকে অনেক বেশি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহামানবের মিলনোৎসব। দক্ষিণপন্থী বিজেপি নাকি সেখানে কট্টর হিন্দুত্বকে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছে। যা অধিকাংশ বাঙালির পছন্দ হয়নি।
দ্বিতীয়ত, বাম জমানার পর রাজ্যজুড়ে উত্তরোত্তর রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতা তথা শহরাঞ্চলের অধিকাংশ পুজো কমিটির সঙ্গেই কোনও না কোনও তৃণমূল হেভিওয়েটের সরাসরি যোগ রয়েছে। সেখানে বিজেপি নেতারা সেভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।
তৃতীয়ত, গ্রাম বাংলার পুজোগুলি তুলনায় সাদামাটা হলেও তাতে আবেগ বা উৎসাহের কোনও খামতি নেই। এই সব পুজো কমিটিগুলি গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার রাজ্য সরকারি অনুদান পাচ্ছে। ফলত, সেখানেও বিজেপি তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
উপরন্তু, তৃণমূলের আমলে রাজ্যে খেলা-মেলার পরিমাণ বেড়েছে। তা নিয়ে বিরোধীরা যতই সুর চড়াক, কলকাতা থেকে জেলা - সর্বত্রই ক্লাবগুলিতে শাসকদলের কর্তৃত্ব আরও বেশি করে কয়েম হয়েছে।
কিন্তু, এবারের পরিস্থিতি আলাদা। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এবার পুজোর আবহেও আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ চলবে। রাজ্য সরকারি অনুদান ফেরানো পুজো কমিটিগুলির পাশে থেকে পরোক্ষে সেই প্রতিবাদেও সামিল হতে চাইছে বিজেপি। যাতে অন্তত ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে বাংলার মাটিতে পদ্মের জমি আরও একটু মজবুত করা যায়।