ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির আকচা-আকচির জেরে এবার মতুয়া মেলার আয়োজন কোন পক্ষ করবে, তা নিয়ে মামলা গড়াল কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতের নির্দেশ, এই বিষয়ে সমস্ত আইন মেনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিককে। আজ (বৃহস্পতিবার - ১৩ মার্চ, ২০২৫) এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আগামী ১৯ মার্চের মধ্য়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে এবং জানাতে হবে।
ঘটনা প্রসঙ্গে দাবি করা হচ্ছে, আইন অনুসারে, বরাবর এই মেলার অনুমতি দিয়ে এসেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি। মেলা উদ্যোক্তাদের করা আবেদনের ভিত্তিতে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কিন্তু, তাহলে এবছর এই মেলার আয়োজন নিয়ে জটিলতা তৈরি হল কেন? আদালতে জানানো হয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি (২০২৫) মেলা করতে চেয়ে আবেদন জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। সেই আবেদন তিনি করেন জেলা পরিষদের কাছেই। কিন্তু, তাঁর সেই আবেদন এখনও বিবেচনাধীন রয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
এদিকে, আগামী ২৭ মার্চ মতুয়া মেলার দিনক্ষণ স্থির হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শান্তনু। আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে আগেই জেলা পরিষদের সভাপতির অবস্থান জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট।
সেই মতো এদিন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক আদালতকে জানান, একথা ঠিক যে শান্তনু মেলা করতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই আবেদন মঞ্জুর করাতে গেলে কিছু নথি ও তথ্যও আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হয়। কিন্তু, শান্তনু সেগুলি দেননি। তাই তাঁর আবেদন এখনও বিবেচনাধীন হয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, শান্তনু ঠাকুরের প্রতিপক্ষ তথা তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর সমস্ত তথ্য ও নথি সহকারে মেলা করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাই তাঁর আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিকের এই দাবি মানতে নারাজ শান্তনুর আইনজীবী। তিনি পালটা আদালতকে জানান, মমতাবালা ঠাকুর আদতে জেলা পরিষদে কোনও আবেদনই জানাননি। কিন্তু, সেটাই নিয়ম। বদলে তিনি সেই আবেদন জানিয়েছিলেন স্থানীয় থানায়। এবং থানা থেকে সেই আবেদন গত ৩ মার্চ জেলা পরিষদের কাছে পাঠানো হয়।
শান্তনুর আইনজীবীর অভিযোগ, এভাবে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ আইনবিরুদ্ধভাবে মমতাবালা ঠাকুরের আবেদন গ্রহণ করেছে। ১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইন মেনে কাজ করেনি তারা। যে আইন বলছে, এই ধরনের আবেদন গ্রহণ এবং তা মঞ্জুর করবেন কেবলমাত্র জেলা পরিষদের সভাধিপতি। এক্ষেত্রে মমতাবালা ঠাকুরের আবেদনটি স্থানীয় থানা ঘুরে জেলা পরিষদের কাছে পৌঁছানোর আগেই শান্তনু সরাসরি জেলা পরিষদকে আবেদন জানিয়ে ফেলেছেন। তাই মেলার অনুমতি তাঁরই পাওয়া উচিত।
সব কিছু শোনার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেটা সংশ্লিষ্ট আইন মেনেই নিতে হবে এবং তা নেবেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক।