১৫ দিনের মধ্যে মিরিকের দুধিয়ায় সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে। মিরিকের দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দুর্গতদের আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাকৃতিক রোষানলে লণ্ডভণ্ড গোটা উত্তরবঙ্গ। দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস ও বন্যা পরিস্থিতির জেরে চরম দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মিরিক পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে মিরিকের দুধিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেঙে পড়ে। যার জেরে মিরিকের সঙ্গে সমতলের সরাসরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই আবহে মঙ্গলবার দুধিয়ায় গিয়ে দুর্গত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও। সেখানে দাঁড়িয়েই দুর্গতদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিরিকের দুধিয়ায় ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি করে দেওয়া হবে একটি অস্থায়ী সেতু, যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়। পাশাপাশি স্থায়ী সেতু তৈরির কাজও চলবে, যা সময় নেবে প্রায় এক বছর।ভাল মানের একটি সেতু তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য রাজ্যের ব্যয় হবে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। প্রথমে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, অস্থায়ী সেতু তৈরি করতে সময় লাগবে এক মাস। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের কষ্ট এক দিনও মেনে নিতে পারি না। তাই ১৫ দিনের মধ্যে এই সেতু তৈরি করতেই হবে।'
বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ ও মুখ্যমন্ত্রী
গত শনিবার রাতভর টানা বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় ধস নামে, নদী উপচে জল ঢোকে জনবসতিতে। বৃষ্টির জেরে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন এলাকায় ধস নামে। জলমগ্ন হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও। রবিবার সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি। এরপর তড়িঘড়ি সোমবার দুপুরে উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে হাসিমারা, পরে নাগরাকাটায় দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কাছে ২৩ জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জন মিরিক, কালিম্পং অঞ্চলের ও ৫ জন নাগরাকাটার। মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের এক জনকে হোমগার্ডের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'টাকা জীবনের বিকল্প নয়। কিন্তু আমরা চাই, এই কঠিন সময়ে যেন কেউ মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকেন। তাই সরকারের তরফ থেকে এটুকু সহযোগিতা করা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে। পরিবারের এক জনকে দেওয়া হবে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি।'
দুর্যোগে ভেঙে যাওয়া অন্যান্য সেতুগুলিও নতুন করে নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মিরিককে ‘সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা’ বলে চিহ্নিত করে দ্রুত পুনর্বাসন ও পরিকাঠামো নির্মাণের নির্দেশও দেন তিনি। তাঁর কথায়, 'যে সেতুগুলি ভেঙেছে, সেগুলি ছোট। আমাদের মিরিক সেতু নির্মাণ করতে হবে।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, মিরিকে ওই সেতু আবার করে তৈরি করতে এক বছর লাগবে। তবে যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত না হয়, সেই কারণে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করে দেওয়া হবে।