নিশীথ প্রামাণিক। কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন অমিত শাহের ডেপুটি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। কোচবিহারের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিশেষে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। কিন্তু এবারের ভোটে কুপোকাত হলেন সেই নীশীথ প্রামাণিক। তৃণমূলের জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার কাছে হেরে গেলেন তিনি। প্রায় ৩৯ হাজার ২৫০ ভোটে পরাজিত। মঙ্গলবার আগেই ছেড়েছিলেন কাউন্টিং হল। কারণটা কী? তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক নিশীথ প্রামাণিক কীভাবে উঠে এসেছিলেন জাতীয় রাজনীতিতে?
বিগত দিনে তৃণমূলেই ছিলেন তিনি। দিনহাটার ছোট্ট গ্রাম ভেটাগুড়িতে বসেই রাজনীতি করতেন। পরবর্তী সময়ে যুব তৃণমূলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। ভেটাগুড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও হয়েছিলেন তিনি। তবে তৃণমূলে থাকাকালীন মাদার তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর রেষারেষি ছিল মারাত্মক। এমনকী সেই সময় খুব দ্রুত তিনি রাজ্য তৃণমূল যুবারও ঘনিষ্ঠও হয়ে গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। এরপর কোচবিহারের সাংসদ হয়ে যান তিনি। সেবার ৫৪ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এমনকী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়ে যান তিনি। সেই শুরু।
অনেকের মতে, এরপর থেকেই ক্রমেই বদলাতে থাকেন নিশীথ। ভেটাগুড়ির সেই গ্রামের সঙ্গে কার্যত দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তাঁর। বলা ভালো কোচবিহারের সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। এমনকী জেলা বিজেপির নেতৃত্বও তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন না। এনিয়ে দলের অন্দরেও অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
মাঝেমধ্যে যখন গ্রামে ফিরতেন তখন চারপাশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সুরক্ষা বলয়। গ্রামের সহজ সরল মানুষ দূর থেকে দেখতেন সবটা। তবে কি এই অহঙ্কারেরই জবাব দিলেন সাধারণ মানুষ?
তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া জানিয়েছেন, এই জয় কোচবিহারবাসীর জয়। কোচবিহারবাসী জেলায় গুণ্ডারাজ খতম করতে চেয়েছিলেন। গুণ্ডারাজের বিসর্জন হল। তবে এনিয়ে বিজেপির কোনও বক্তব্য মেলেনি। তবে বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্য়েই এই ফল নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে শুরু করেছেন।
তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে এসেছিলেন জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। প্রাক্তন শিক্ষক। সিতাইয়ের বিধায়ক। তাঁকেই এবার হেভিওয়েট নিশীথের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। এদিকে নিশীথকে পরাজিত করতে এবার কার্যত তৃণমূলের সব গোষ্ঠী ময়দানে নেমে পড়েছিল। সব দ্বন্দ্ব ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রচারে। অন্যদিকে বিজেপি সেই ‘পুরনো কৌশলের’ উপর ভিত্তি করে ভোটে জেতার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বড় জবাব পেলেন নিশীথ প্রামাণিক।
এবার কি করবেন? তৃণমূলে ফিরবেন নাকি অন্য রাস্তায়? প্রশ্নটা রাখা থাকল ভবিষ্যতের খাতায়।