করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বাবার। তাঁর মৃতদেহ সৎকারে এগিয়ে আসেননি কোনও আত্মীয়, প্রতিবেশীরা। সারারাত মৃতদেহ আগলে বসেছিলেন ছেলে ও স্ত্রী। খবর পেয়ে এগিয়ে এলেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। করোনা আতঙ্ক উড়িয়ে প্রতিবেশীর সৎকারে হাত লাগালেন তাঁরাই। শেষে তাঁদের উদ্যোগেই বাবার মৃতদেহ দাহ করে বাড়ি ফিরল ছেলে। এই ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের বাদুড়িয়া থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে। অমানবিকতাকে ছাপিয়ে সম্প্রীতির এক অন্যান্য নজির গড়ল বাদুড়িয়া।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বছর ৪৯—এর প্রবীর সরকার পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন। স্ত্রী মেনকা ও তাঁদের একমাত্র ছেলে ইন্দ্রজিৎকে নিয়ে তাঁদের ছোট্ট সংসার।
কয়েকদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ বাড়িতেই মৃত্যু হয় প্রবীরবাবুর। এই ঘটনা প্রতিবেশীরা জানতে পেরে তাঁদের সন্দেহ হয় যে, করোনায় ওই ব্যাক্তির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। শুধু সন্দেহের বশেই এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ির দরজা, জানলা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পড়েন। মৃতের ছেলে ইন্দ্রজিৎ পাড়ার সকলকে জানানোর সত্ত্বেও মৃতদেহ সৎকারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। অগত্যা ঘরের মধ্যে প্রায় একদিন ধরে পড়ে থাকে প্রবীর বাবুর মৃতদেহ! সেই মৃতদেহ আগলে বসে থাকেন স্ত্রী মেনকা।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার সকালে মৃতদেহ ঘরে পড়ে থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়। আর কেউ নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই প্রকৃত বন্ধু হয়ে দেহ সৎকারের জন্য এগিয়ে আসেন।
নিজেদের অর্থ দিয়ে সাহেব আলী মোল্লা, হাফিজুল মণ্ডল, আরিফুল আকুঞ্জি, শরিফুল মণ্ডল, ফিরোজ মনি, শাহানুর মণ্ডল—সহ ওই গ্রামের বহু মুসলিম সম্প্রদাযের মানুষ রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি শ্মশানে দেহ নিয়ে গিয়ে হিন্দু শাস্ত্রমতে তাঁর মুখাগ্নি থেকে শুরু করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
সঙ্গে যান ছেলে ইন্দ্রজিৎও। তবে কোনও আত্মীয়, প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেননি। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলেও এগিয়ে আসেন গ্রামেরই আরিফুল, শরিফুলেরাই যারা হয়ে উঠেছেন প্রকৃত পরিজন।
করোনায় মৃত্যু সন্দেহে ২৪ ঘণ্টা ঘরে পড়ে থাকা মৃতদেহের সৎকারে বিমুখ ছিল আত্মীয় পরিজনেরা। অবশেষে মুসলিম ভাইয়ের কাঁধে চড়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় হিন্দু ভাইয়ের। আর এতেই সম্প্রীতির অন্যন্য নজির গড়ে বাদুড়িয়ায়।