পাহাড় তুমি কার? এবার জোরালো হল এমনই প্রশ্ন। কারণ অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হল পাহাড়ে। বিনয় তামাংদের অভিযোগ, তাঁদের দলের এক যুবককে মঙ্গলবার ছুরি মারা হয়েছে। ঘটনাটি দার্জিলিং সদরের তাকভর চা বাগান এলাকার। এই কারণে বিনয় তামাংরা আঙুল তুলেছেন বিমল গুরুংপন্থীদের দিকে। তবে বিমল ঘনিষ্ঠরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন হল?
জানা গিয়েছে, কলকাতায় এসে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিমল গুরুং। তখনই বেঁকে বসেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং শিবির। নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন বিনয়। সেখানের বৈঠকের পরও পাহাড়ে দেখা গিয়েছিল পৃথক লাইন। তাই এই ঘটনা ঘটিয়ে বার্তা দিল বিমলপন্থীরা বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে বৈঠক করেন জিএনএলএফ। বিজেপির অপর এক জোটসঙ্গী গোর্খা লিগও জানিয়েছে, বিজেপি অবিলম্বে কাজ না করলে তারাও দূরত্ব বাড়াবে। এখন পাহাড়ে রয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এই পরিস্থিতিতে বিমল গুরুং ও বিনয় তামাং শিবিরের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ল। বানেশভেক চা বাগানে গুরংপন্থীদের সভা ছিল। সেখান থেকে হামলা হয় বলে অভিযোগ। বিনয় শিবিরের অভিযোগ, কুকরি–আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তাঁদের উপরে হামলা চালায় বিমলের সমর্থকরা। আক্রান্ত যুবককে দার্জিলিং সদর হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রক্তাক্ত আন্দোলন এবং ১০৪ দিনের বনধের পরে এতদিন পাহাড় শান্তই ছিল। আবার সেখানে কারও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল। এই ঘটনায় গুরুংপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিনয়পন্থীরা। এই বিষয়ে বিনয় তামাং বলেন, ‘আমাদের যুব কর্মী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ২০১৭ সালে এই হিংসার রাজনীতি থেকে সরার জন্য আমি গুরুংয়ের দল থেকে আলাদা হয়েছিলাম। আমরা অহিংসার পথেই থেকেছি। আমি পাহাড়বাসীর কাছে আবেদন করছি, সকলে বিমল গুরুংয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হোন।’
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই এলাকায় গুরুংপন্থীরা একটা সভা করছিলেন। তার পরে সেখানে নতুন করে দলীয় দফতর খোলা হয়। রাতে বিনয়পন্থী চেতন থাপা আরও কয়েকজন সেখান দিয়ে যান। অভিযোগ, বিনয়পন্থীদের দেখে কটাক্ষ করা হয়। চেতন এগিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর পিঠে ছুরি দিয়ে এক যুবক আঘাত করে পালায় বলে অভিযোগ। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে পাহাড় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব বুঝে পদক্ষেপ করতে চাইছে গোর্খা লিগ এবং জিএনএলএফ। মঙ্গলবারও শিলিগুড়িতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা এবং দার্জিলিঙের বিধায়ক নীরজ জিম্বা বৈঠক করেন রাজু বিস্তার সঙ্গে। তিনি নীরজ জিম্বাকে জানান, দার্জিলিং যেতে পারলে ভাল, না হলে তিনি দিল্লিতে সবার সঙ্গে দীপাবলির পরেই বৈঠকে বসবেন। রাজুকে জিএনএলএফ নেতারা জানিয়ে এসেছেন, পুজোর পরেই যাতে দ্রুত যাতে বৈঠক ডাকা হয়, সেই ব্যবস্থা করতে। ২০২১ সালের ভোট প্রক্রিয়া শুরুর আগেই দলীয় পথ বাছতে চাইছে জিএনএলএফ। রাজু বিস্তা বলেন, ‘বিমল গুরুং আলাদা হওয়াটা বিজেপি জোটের পক্ষে ভালো হয়নি। তবে বাকিরা একসঙ্গে আছি।’ নীরজ বলেন, ‘আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি তো রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারে। আমরা তাই বিকল্প পথ খোলা রাখছি।’
বিজেপির জোট সঙ্গী গোর্খা লিগের পক্ষেও দলের সহ–সভাপতি বিক্রম রাই এবং সাধারণ সম্পাদক শক্তি শর্মা বলেন, ‘সাংসদ রাজু বিস্তাকে বলেছি, দ্রুত উন্নয়নের কাজ করতে হবে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আর কতদিন চলবে?’ আরও জানা গিয়েছে, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং জিটিএ’-এর নিরপেক্ষ অডিটের দাবিও জানানো হয়েছে। এসবের মধ্যে জিটিএ-এর অস্থায়ী কর্মীদের তৃণমূলে যোগদান জারি রয়েছে। ইউনাইটেড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন মিরিক মহকুমার সংগঠনও শাসকদলে মিশে গেল বলে জানানো হয়েছে।