‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি।’
সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়ের গানের কথায় এবার যেন সুরে সুর মেলাল উত্তরবঙ্গের আস্ত একটা গ্রাম। ২২ মার্চ লকডাউনের শুরু থেকে দেশ তথা রাজ্যের সর্বত্র তালা পড়ে যায়। আনলক পর্বে তালা খুললেও এখনও তালাবন্দি জলপাইগুড়ি জেলার তরিবাড়ি গ্রাম। আর এভাবেই আপাতত থাকতে চান মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য লাগোয়া এই গ্রামের বাসিন্দারা।
শিলিগুড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট এই গ্রাম আদতে একটি পর্যটনকেন্দ্র। মাত্র ৯৪টি বাড়ি রয়েছে এখানে। যাঁরা থাকেন, তাঁরা বর্তমানে বাইরের কাউকেই গ্রামে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। সদর্থকভাবে জারি রয়েছে লকডাউন। বাইরের কেউ যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে তার জন্য বেশ কয়েকজন রক্ষী সর্বদা তরিবাড়ির আনাচে–কানাচে নজরদারি চালান। যদি কারও বিশেষ প্রয়োজন থাকে, তাঁদের সম্পূর্ণ স্যানিটাইজ করে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে গ্রামে।
কিন্তু এই ঢিলেঢালা লকডাউনের সময় ছোট এই গ্রামে এত কড়াকড়ি, এত নিষেধাজ্ঞা এখনও কেন রয়েছে? তরিবাড়ি গ্রামোন্নয়ন সমিতির সম্পাদক ইউডেন লেপচা বেশ গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘কারণ, যেখানে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র দিনের পর দিন করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে, সেখানে এই গ্রামে এখনও পর্যন্ত একজনও করোনায় আক্রান্ত হননি। আর গ্রামের স্বাস্থ্য যাতে এভাবেই সুরক্ষিত থাকে তাই আমরা যতদিন পারব এভাবে লকডাউন চালিয়ে যাব।’
যদিও কোনও সরকারি আধিকারিক হলফ করে বলতে পারেননি যে জলপাইগুড়ি জেলার একমাত্র করোনামুক্ত গ্রাম তরিবাড়িই কিনা। ইউডেন আরও বলছিলেন, ‘গ্রামে একটি করে মন্দির, গির্জা ও বৌদ্ধবিহার রয়েছে। শিলিগুড়ির আশপাশে আমাদের গ্রাম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তাই এই অতিরিক্ত সতর্কতা।
স্থানীয় যৌথ বন পরিচালনা সমিতির সহ সভাপতি সুদীপ প্রধান বলছিলেন, ‘এমন অনেক সময় হয়েছে যে বাইরের কেউ গ্রামে এলে তাঁদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছেন গ্রামরক্ষীরা। তখন গ্রাম সমিতির বরিষ্ঠ কাউকে এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে।’ তিনি জানান, যখন সারা বিশ্বে সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে, করোনাকাল মিটে যাবে, তখন আবার তরিবাড়ির দরজা সকলের জন্য খোলা হবে।
উল্লেখ্য, ১৩ অগস্ট প্রকাশিত রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন যথাক্রমে ৪২ ও ১৮ জন। দার্জিলিংয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩৩৭ এবং জলপাইগুড়িতে ১৯৮৪। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিলিগুড়ি মহকুমা ও শিলিগুড়ি পুর এলাকার লোকজন আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গিয়েছেন। এ অবস্থায় তরিবাড়ির মতো একটা ছোট্ট গ্রামের এই ব্যবস্থাপনা সত্যিই নজির সৃষ্টি করেছে।