একটা সময় জঙ্গলমহল ‘হাসছে’ বলে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু সেই জঙ্গলমহল যে তাঁর ‘হাসি’ কেড়ে নিয়েছে, তা কার্যত বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাখঢাক না করেই একাধিকবার স্পষ্ট মন্তব্য করলেন, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। এবার আপনারাও পাশে থাকুন!
বুধবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। যে জেলার অন্তর্ভুক্ত জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্যের শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্কে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছিল। লোকসভা ভোটে সেই ঝাঁকুনি সামলে ওঠা তো দূর অস্ত, জঙ্গলমহলে তৃণমূলের আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক পুরোপুরি ধসে গিয়েছিল। আর এলাকায় ক্রমশ নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করেছে বিজেপি। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে সেই হারানো ভোট ব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে সেই ইঙ্গিত মিলেছিল। বুধবার সেই ‘চেষ্টা’ আরও স্পষ্ট হয়েছে।
প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন গ্রামীণ রাস্তা ও স্কুল নিয়ে জাকাত মাঝি পারগানা মহলের দাবি-দাওয়ার দুটি তালিকা প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে তুলে দেন এবং ‘দেখে নেওয়ার’ নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ, আপনারা নির্বাচনের সময় নানারকম সংগঠন তৈরি করেন। সে করুন, আপনারা তৈরি করতেই পারেন, সেটা আপনাদের ফ্রিডম (স্বাধীনতা)। কিন্তু আপনারা (কোনও কাজ) বলেছেন, কিন্তু আমি করিনি। এরকম একটাও কাজ হয়নি। প্রত্যেকটা করে দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ করব যে আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। সরকারের সঙ্গে থাকুন। মা-মাটি-মানুষের সরকারের সঙ্গে থাকুন।’
সেখানেই শেষ হয়নি, ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে উদ্দেশ করে ‘ভুল না বোঝার’ আর্জি জানান মমতা। একইসঙ্গে সরাসরি বিজেপি শাসিত রাজ্যের হাথরাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করেই মমতা বলেন, ‘আমি সব মানুষকে মানুষের চোখে দেখি। আজ দলিতদের উপর সবথেকে বেশি অত্যাচার হচ্ছে। আদিবাসীদের উপরে। সাধারণ মানুষের উপরে। গরিব মানুষের উপরে। যখন যা প্রয়োজন পড়বে, আমার কাছে ডিমান্ড করবেন। কিন্তু ভুল বুঝবেন না। যতক্ষণ টাকায় কুলোবে, ততক্ষণ করে দেব, আবার যখন টাকা আসবে তখন করে দেব।’ সেই টাকার অভাবের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারকেই দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তারপর অপর এক প্রতিনিধি একটি সেতুর সঙ্গে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির দাবি জানান। তা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তৈরি হবে বলে আশ্বস্ত করেন মমতা। তারপর আরও দাবি জানালে মমতা বলেন, ‘পরে দেব। সব তো দিয়েছি, যা চেয়েছেন, সব দিয়েছি, এবার আপনারা কিছু দিন।’