তারিখটা ১৩ অক্টোবর ২০১৭। ঠিক তিন বছর আগের কথা। বিমল গুরুংদের রক্তাক্ত–অগ্নিগর্ভ আন্দোলনে জ্বলন্ত পাহাড়কে শান্ত করতে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক অফিসার অমিতাভ মালিক। গুরং–বাহিনীর গুলি এসে লেগেছিল তাঁর বুকে। সেদিন সকালে টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠা ‘ব্রেকিং নিউজ’ দেখে রাজ্য পুলিশের সাব–ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিকের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছিলেন সৌমেন মালিক–গঙ্গা মালিকরা। তারপর জল গড়িয়েছে অনেক। দুর্গাপুজোর আলোর রোশনাইয়ে বাকি রাজ্য ভাসলেও অমিতাভ মালিকের বাড়িতে তার রেশ পৌঁছায়নি। স্ত্রী বিউটি মালিককে চাকরি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। আর তিন বছর পরে সেই অক্টোবর মাসেই আবার একটা ‘ব্রেকিং নিউজ’ শুনলেন অমিতাভ মালিকের পরিবার। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরছেন বিমল গুরুং। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে সততার কি কোনও দাম নেই?
উল্লেখ্য, পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের চরম পর্যায়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল দার্জিলিং পাহাড়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে। আত্মগোপন করেছিলেন বিমল গুরুং। ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর দার্জিলিংয়ের রঙ্গিত নদীর তীরবর্তী সিংলার জঙ্গলে সিরুবাড়ি এলাকায় গুরুংয়ের খোঁজে গিয়েছিল পুলিশ বাহিনী। সেই দলে ছিলেন অমিতাভ মালিক। গুরুংয়ের অনুগত বাহিনী আক্রমণ করে পুলিশকে। তাদের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছিলেন অমিতাভ।
ঠিক তিন বছর পর যেন ফ্ল্যাশ ব্যাক থেকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই বিমল গুরুংকেই বলতে শোনা গেল, ‘আমি অপরাধী নই। দেশদ্রোহীও নই।’ কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে এই কথা শুনে অমিতাভের বাবা মধ্যমগ্রামের পাটুলির শরৎকাননের বাসিন্দা সৌমেন মালিকের প্রশ্ন, ‘তা হলে প্রকৃত খুনি কে? কে মেরেছে আমার ছেলেকে?’ আজ তাঁরা আর ছেলের শোক নিয়ে বেঁচে থাকতে চান না। তাই দুঃখ করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে এইটুকুই বলেছেন তিনি।
ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে সেদিনের দৃশ্যটি ছিল—কফিনবন্দি অমিতাভের দেহ আঁকড়ে ধরে স্ত্রী বিউটির কান্নার দৃশ্য। সেদিন রাজ্য পুলিশের তৎকালীন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে বিউটি বলেছিলেন, ‘স্যার আমার সব শেষ। ওঁর (বিমল গুরুং) মাথায় গুলি করুন।’ এখন অবশ্য বিউটি অনেক শক্ত হয়েছেন বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর। আসলে সংসার তো তাঁকেই চালাতে হচ্ছে। আর গুরুং আর তৃণমূলের এই আঁতাঁত দেখে সৌমেনবাবু দৃশ্যতই হতাশ।
সেদিনের চেনা ছবিটা আজ যেন বড় অচেনা ঠেকছে উত্তর ২৪ পরগনার খড়িবাড়িতে এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট কারখানায় চাকরি করা প্রৌঢ় সৌমেনবাবুর কাছে। কিন্তু করোনা আবহে সেই চাকরি আর নেই। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগ। একই অবস্থা অমিতাভের মায়েরও। পুত্র হত্যায় মূল অভিযুক্ত গুরুংয়ের শাস্তি না হয়ে যদি এমন পরিস্থিতি চলতে থাকে তবে কোথায় ভরসা পাবেন তাঁরা?