শনিবার রাতেই মরশুমের প্রথম তুষারপাতের সাক্ষী ছিল সান্দাকফু। তার মধ্যেও পাহাড়ের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং। তিন বছর পর প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে বার্তা দিলেন, আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ আসন তুলে দিতে চান।
আদিবাসী সংগঠনের রেল অবরোধের জন্য রবিবার মালদহে আটকে পড়েছিলেন গুরুং। সেখান থেকে বিকেল চারটে নাগাদ সড়কপথে শিলিগুড়িতে পৌঁছান। ঘণ্টাখানেক দেরি হলেও গান্ধী ময়দানে ঠাসা ভিড় ছিল। গান গাইতে গাইতে সমর্থকরা তাঁকে মঞ্চে নিয়ে যান। কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন গুরুং। তবে নেপালি ভাষায় ভাষণে পুরনো ঝাঁঝের কোনও অভাব ছিল না। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে মমতাকে সমর্থন করে অধিকাংশ আসন জেতাব।’
গুরুং অভিযোগ করেন, গোর্খাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে গোর্খাল্যান্ডের সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। ১১ টি জাতিকে তফসিলি মর্যাদার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট মিটতেই তা পূরণ করেননি। নাম করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহ-সভাপতি মুকুল রায়-সহ দার্জিলিঙের বিজেপি জনপ্রতিনিধিদেরও আক্রমণ শানান। এমনকী জানান, উত্তরবঙ্গের যেখানে যেখানে বিজেপি সভা করবে, সেখানে তিনিও সভা করবেন। জানাবেন, বিজেপি কীভাবে প্রতিশ্রুতি ‘ভঙ্গ’ করেছিল।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধানের কথায়, ‘গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন সত্যি করবেন বলেছিলেন মোদী। বলেছিলেন, গোর্খা আমার স্বপ্ন, এখনও পূরণ হয়নি। উত্তরবঙ্গে কোনও উন্নয়ন করেননি মোদী। ভোটের স্বার্থে গোর্খাদের ব্যবহার করেছে বিজেপি, শোষণ করেছে। এক একটা ভোট দিয়ে বিজেপিকে জবাব দেব।’ গুরঙের দাবি, মমতা যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূরণ করেছেন। তাই একসঙ্গে বিজেপিকে জবাব দেবেন।
দীর্ঘদিন পরে প্রকাশ্যে সভা করায় গুরঙের কাছে রবিবারের সভা ছিল ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। সেজন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে গুরুং-পন্থী মোর্চা সমর্থকদের আনা হয়েছিল। সেই সভার পর বিনয় তামাং এবং অনীত থাপাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন গুরুং। তামাং-গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলানোর যাবতীয় সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে গুরুং অভিযোগ করেন, দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বিনয়-অনীতরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, তিন বছর প্রকাশ্য সভা করে অনেকটা আত্মবিশ্বাস পাবেন বিমল। তাতে পাহাড়ের রাজনীতির উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে গুরুং ও তামাং-গোষ্ঠী স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা হাত মিলিয়ে এগোবে না। সেক্ষেত্রে আগামিদিনে প্রবল ঠান্ডার পাহাড়ের রাজনৈতিক পারদ যথেষ্ট বেশি থাকবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।