বয়স ১০৪ বছর। আর এই বয়সের এক তৃতীয়াংশ সময় কেটেছে জেলের ভিতরে। দীর্ঘ সময় জেলখানার ভিতরে থাকাটা অনকে বন্দির কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। কেউ আবার জেল থেকে পালানোর ছকও কষেন। ফলে জেল থেকে মুক্তির খবর পেলে জেলবন্দিদের মধ্যে আনন্দের শেষ থাকে। কিন্তু, ঠিক যেন বিপরীতটাই হল শতায়ু বন্দি রসিক মণ্ডলের ক্ষেত্রে। জেল মুক্তির খবর শুনে আনন্দের পরিবর্তে যেন মন গেল তাঁর। টানা ৩৬ বছর ধরে জেলে রয়েছেন তিনি। আর এই দীর্ঘ সময় ধরে জেলে থাকার ফলে জেলখানা যেন তার কাছে বাড়িতে পরিণত হয়ে উঠেছে। তাই জেল মুক্তির খবরে তিনি খুশি নন। কারণ তিনি বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে চান। ওই বৃদ্ধ এমনটাই আবেদন করলেন জেলখানা কর্তৃপক্ষের কাছে।
আরও পড়ুন: দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ৪৬ বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি
জানা গিয়েছে, ১০৪ বছরের ওই বন্দি রসিক মণ্ডল বর্তমানে মালদা জেলা সংশোধনাগারে রয়েছেন। তিনি মালদার মানিকচকের গঙ্গার পশ্চিম নারায়নপুর চর এলাকার বাসিন্দা। ১৯৮৮ সালে একটি খুনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই থেকেই তিনি জেলে রয়েছেন। তারই মধ্যে ১৯৯৪ সালে সেই মামলায় রসিকের আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পরে মামলাটি হাইকোর্টে যায়। সেখানে তিনি জামিন পান। পরে অবশ্য তার জামিন খারিজ হয়ে যায়। ফলে তাকে জেলেই থাকতে হয়।
এদিকে, করানোর সময় অন্যান্য বন্দিদের মতো রসিককেও প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, প্যারোলে মুক্তি পেলেও বাড়িতে তার মন দাঁড়ায়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি জেলে চলে যান। প্রসঙ্গত, রসিকের বাড়িটি গঙ্গার ভাঙন কবলিত এলাকায় অবস্থিত হলেও এখনও অক্ষত রয়েছে তার বাড়িটি। সেখানে রয়েছেন তার ৯৬ বছরের শয্যাশায়ী স্ত্রী। এছাড়াও, চার ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সকলের বিয়ে হয়েছে। এমনকী রসিকের নাতি নাতনিদেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রসিকের বড় মেয়ে হাইস্কুলের শিক্ষিকা।
জেলের তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে রিলিজ অর্ডার তাদের হাতে এলেই রসিককে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু, তাতে মন খারাপ রসিকের। জানা গিয়েছে, জেল কর্তৃপক্ষের কাছেই মুক্তির খবর পান রসিক। তবে খুশি হওয়ার বদলে তার মন খারাপ হয়ে যায়। রবিবার তিনি জেল সুপারের কাছে অনুরোধ করেন তাকে যেন জেল থেকে মুক্তি না দেওয়া হয়। তিনি সেখানেই থাকতে চান। তাঁর কথায়, ‘স্যার আমি এখানেই থাকতে চাই। এখানে আমার থাকতে ভালো লাগছে। আমার মুক্তি চাই না আমি বাড়ি যেতে চাই না।’ জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী জেলের হাসপাতালের একটি কেবিনে একাই থাকেন রসিক। কারও সঙ্গে তিনি কোনওদিন ঝগড়া করেননি। জেলের খাবার ভর পেট খাওয়ার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। যার ফলে এই বয়সে এখনও তিনি ফিট রয়েছেন বলে জানাচ্ছেন জেলের আধিকারিকরা।