মহামারী, দুর্ভিক্ষ আর মৃত্যু জীবনে কিছু কম দেখেননি। তবে ১১০ বছরের জীবনে লকডাউনের মতো অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা হারাধন সাহার।
প্রায় তিন দশক আগে হারিয়েছেন স্ত্রীকে। কয়েক বছর আগে চিরবিদায় নিয়েছেন বড় ছেলে। এর পরেও জীবনে নতুন কিছু ঘটতে পারে, তা কখনও ভাবেননি ১১ সন্তানের জনক হারাধনবাবু। অকপটে জানিয়েছেন, ‘চল্লিশের দশকে বাংলার দুর্ভিক্ষ দেখেছি। সত্তরের দশকে হানা দিয়েছিল গুটিবসন্ত মহামারী। তার পরে এল কলেরাও। কিন্তু লকডাউনের মতো এমন অবস্থা জীবনে দেখিনি, যখন একমাসের উপরে মানুষ ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আমার জীবনে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।’
স্মৃতি হাতড়ে সরস্বতীগঞ্জ গ্রামের শতোর্ধ্ব বলেন, ‘যখন আমাদের গ্রামে গুটিবসন্ত হানা দিয়েছিল, তখন এখানে কোনও ডাক্তার-বদ্ধি ছিল না। চিকিৎসা বিজ্ঞানও সে সময় এত উন্নত হয়নি। মহামারীতে এক বন্ধুকে হারিয়েছিলাম। শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতাম আর আক্রান্ত প্রতিবেশীদের বাড়ি যাওয়া বন্ধ রেখেছিলাম। মৃতদের গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে সমাধিস্থ করা হত।’
হারাধনবাবুর আশা, করোনাভাইরাস সারানোর টিকা বা ওষুধ খুব তাড়াতাড়ি আবিষ্কার করে ফেলবেন গবেষকরা।
তিনি বলেন, ‘আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়েছে। এই রোগের জন্য কেন আমরা টিকা বা ওষুধ বের করতে পারছি না? মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি বিজ্ঞানীরা কোনও সমাধান খুঁজে পাবেন।’
বয়সের থাবা খুব বেশি কাবু করতে পারেনি হারাধন সাহাকে। একটি কানে কম শোনেন, এটাই যা সমস্যা। এখনও গ্রামের মন্দিরে রোজের আড্ডায় নিয়মিত হাজিরা দেন। আড্ডার সদস্যদের কেউ কেউ তাঁর কাছাকাছি বয়েসি, অন্যেরা খানিক ছোট। তাতে অবশ্য গল্পের ছন্দপতন ঘটে না। আত্মীয়রা গাড়ির ব্যবস্থা করলেও গোটা পথ রোজ হেঁটে যেতেই পছন্দ করেন এই প্রপিতামহ।
লকডাউনের ঠেলায় সেই আড্ডায় যেতে পারছেন না বলেই বড় আক্ষেপ হচ্ছে হারাধনবাবুর।