কেষ্ট ফিরতেই কি কেষ্ট লাভ হল দেউচা পাচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রকল্পের জমিদাতা পরিবারগুলির সদস্যদের? নাকি পুরোটাই কাকতালীয়? একথা বলার কারণ হল, শুক্রবারই এই প্রকল্পের জমিদাতাদের মধ্যে মনোনীত ২৮ জন প্রার্থীর হাতে রাজ্য়ে সরকারের তরফে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। মূলত, জমি দানের ক্ষতিপূরণের একটি অংশ হিসাবে এই নিয়োগপত্র পেলেন তাঁরা।
ওই দিন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় সংশ্লিষ্ট ২৮ জনের হাতে ওই নিয়োগপত্র তুলে দেন। সরকারি সূত্র মারফত খবর হল, দেউচা পাচামি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নির্দিষ্ট নির্দেশ আসার পরই এই প্রকল্প নিয়ে এগোনোর বিষয়ে তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসন। তারই জেরেই শুক্রবারের ওই নিয়োগপত্র বিলি।
অন্যদিকে, যে বিষয়টি বিশেষ লক্ষ্যণীয়, তা হল - দিন কয়েক আগেই দেউচা পাচামির জমিদাতারা বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর কাছে নিজেদের সুবিধা, অসুবিধার কথা জানিয়ে দরবার করেন। বোলপুরের তৃণমূল ভবনে এই সাক্ষাৎ হয়।
এদিকে, স্থানীয় সূত্রের তরফে একটি অভিযোগ সামনে এসেছে। তা হল - গত একবছর ধরে নাকি অত্য়ন্ত ধীর গতিতে এই প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এই অবস্থায় জমিদাতারা অনুব্রত ওরফে কেষ্টর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর তিনি সংবাদমাধ্যমকে স্পষ্টই জানান, বীরভূমে থাকাকালীন ১,৫০০ জনের চাকরির ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপর আর কোনও জমিদাতা নিয়োগপত্র পাননি।
অনুব্রত জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। আর সেই ঘটনার ঠিক দু'দিন পরই দেউচা পাচামির ২৮ জন জমিদাতার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন জেলাশাসক!
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি অনুব্রত ফিরতেই বীরভূমে ফের এই প্রকল্পের কাজে গতি বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার? নাকি এটা নেহাতই কাকতালীয় একটা ঘটনা? এদিকে, জমিদাতারা, যাঁরা এত দিন নিয়োগপত্র পাচ্ছিলেন না, কী করে তাঁরা অনুব্রতর সঙ্গে দেখা করার দু'দিনের মধ্যেই সেই কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি হাতে পেয়ে গেলেন?
এ নিয়ে জেলা রাজনীতিতে নানা কথা, কাটাছেঁড়া চললেও প্রশাসনের দাবি, যা কিছু হয়েছে, সবটাই সাধারণ এবং সরকারি নিয়ম মেনে। জেলাশাসক যেমন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক প্য়াকেজের আওতায় জমিদাতার এইসব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
এই প্যাকেজের আওতায় প্রত্যেক বিঘা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন ১৩ লক্ষ টাকা এবং পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত মোট ১৬টি পর্যায়ে চাকরি প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাতে মোট ১,৬২৪টি নাম রয়েছে। এই প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিতে সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
সেই প্রক্রিয়ার আওতাতেই ১৩তম পর্যায়ের অধীনে ২৮ জনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এবং তাঁদের নামে আসা নিয়োগপত্রই শুক্রবার সেই প্রার্থীদের হাতে তুলে দেন জেলাশাসক।
তিনি জানিয়েছেন, অবশিষ্ট প্রার্থীদের নাম মঞ্জুর হলে তাঁদের নামেও নিয়োগপত্র আসবে। সেগুলি তখন তাদের দিয়ে দেওয়া হবে।